• বিশৃঙ্খলায় স্তব্ধ শহরের কেন্দ্র, চরম ভোগান্তি
    বর্তমান | ২৮ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও হাওড়া: কারও ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, কারও অফিস, কারও আবার দূরপাল্লার ট্রেন ধরার তাড়া। কিন্ত‌ু কী করে পৌঁছবেন গন্তব্যে? আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ছাত্র সমাজ ও সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নবান্ন অভিযানে কলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্রই যে স্তব্ধ! চরম বিশৃঙ্খলার জেরে মঙ্গলবার বেলা গড়ানোর আগে বন্ধ করে দিতে হয়েছে হাওড়া ব্রিজ ও দ্বিতীয় হুগলি সেতু। কার্যত বিচ্ছিন্ন গঙ্গার দু’পারের দু’টি শহর। তার জেরে সন্ধ্যা পর্যন্ত চরম ভোগান্তির শিকার হলেন সাধারণ মানুষ।

    বিহারের নওয়াদার বাসিন্দা হেমন্তের মা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। এদিন সকাল ১১টায় ছিল ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট। সেটাও ই এম বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেইমতো এদিন সকালে হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছন মা-ছেলে। কিন্তু নবান্ন অভিযানের জেরে বাস, ট্যাক্সি, অ্যাপ ক্যাব সব উধাও। অপরিচিত এই শহরে একা অসুস্থ মাকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন হেমন্ত। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হাওড়া স্টেশনের বাইরে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পাগলের মতো দৌড়ে বেড়ালেন। তবু গাড়ি মিলল না।

    ইতালিতে মাস্টার্স পড়তে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এদিন শহরে পা রেখেছিলেন ঝাড়খণ্ডের ছাত্র শিবরাজ শর্মা। ভিসা সংক্রান্ত কাজে নির্দিষ্ট সময়ে তাঁকে পৌঁছতে হবে এলগিন রোডের একটি অফিসে। সঙ্গে মা সুষমা শর্মা। নবান্ন অভিযানের কারণে দুর্ভোগের শিকার হলেন তাঁরাও। হাওড়া স্টেশনে নামার পর অচেনা শহরে ভরসা বলতে ছিল শ‌ুধু পুলিস। কিন্ত‌ু রাস্তায় গাড়ি না থাকায় তারাও কোনও সাহায্য করতে পারেননি। পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজের জন্য মেদিনীপুরের কোতওয়ালি থেকে আসা বিমল ঘোষও একই পরিস্থিতির শিকার হলেন। 

    আন্দোলনকারীদের তাণ্ডব রুখতে এদিন সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় হাওড়া ব্রিজ। কলকাতা ও হাওড়া দু’প্রান্তেই বসিয়ে দেওয়া হয় বড় বড় গার্ড রেল বা সিকিওরিটি ব্যারিকেড। একেবারে ওয়েল্ডার নিয়ে এসে ঝালাই করা হয় প্রত্যেকটি গার্ড রেল। যান চলাচল বন্ধ হলেও হাওড়ার দিকে সরু একটি জায়গা ছাড়া হয় পথচারীদের জন্য। কার্যত চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে সেখান দিয়েই ফুটপাতে উঠতে হচ্ছিল। তারপর হেঁটে হাওড়া ব্রিজ পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে দেখা যায় ক্যান্সার আক্রান্ত, সেক্টর ফাইভের আইটি কর্মী থেকে শুরু করে হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে। বেলা গড়াতেই হাওড়া ব্রিজের দখল নেয় একদল মানুষ। ব্রিজের মাঝে রাস্তায় বসে দেদার চলে সেলফি তোলার পর্ব। ব্রিজের দু’প্রান্তেই একটি গাড়ি পাওয়ার আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় হাজার হাজার মানুষকে। ঘুরে যেতে হয় অ্যাম্বুলেন্সকেও। 

    হাওড়া ব্রিজে আটকে পড়া আইটি কর্মী সুপ্রীতি ঘোষ বলেন, ‘আমরা সকলেই দোষীর শাস্তি চাই। তা বলে সপ্তাহের মাঝে এমন এক কর্মব্যস্ত দিনে এমন করে শহর অচল করে দেওয়ার কোনও মানে হয় না। এতে কী আমরা নিরাপদে অফিস যেতে পারছি?’ এই পরিস্থিতিতে গঙ্গাপারের দুই শহরে লাইফলাইন ছিল শুধুমাত্র মেট্রোরেল আর ফেরি সার্ভিস। তবে সেখানেও অতিরিক্ত ভিড় হওয়ায় ভোগান্তি বাড়ে মানুষের। 

    সকাল ১০টায় বন্ধ করে দেওয়া হয় দ্বিতীয় হুগলি সেতুও। ডি এল খান রোড ক্রসিং থেকে গণপরিবহণ বন্ধ করে দেয় পুলিস। ঘুরিয়ে দিতে হয় একের পর এক অ্যাম্বুলেন্সও। শুধু তাই নয়, সমস্যা পড়েন গর্ভবতী সেনাবাহিনীর এক মহিলা অফিসারকেও। 

    শেষপর্যন্ত সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ দুই সেতু দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ছন্দে ফিরতে শুরু করে কলকাতা এবং হাওড়া। আজ, বুধবার বিজেপির ডাকে বাংলা বন্‌ধ হবে। ফলে আবারও এক ভোগান্তির শিকার হতে হবে কি না, সেই প্রশ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরেছে আম জনতা।
  • Link to this news (বর্তমান)