• বেসরকারি হাসপাতালে ১৮ দিন ধরে কর্মবিরতি চালাতে পারতেন? প্রশ্ন রোগীর পরিজনের
    বর্তমান | ২৮ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কারও বক্তব্য, ‘আমাদের কি প্রাইভেট হাসপাতালে যাওয়ার ক্ষমতা আছে? কেউ বলছেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালে দিনের পর দিন এমনভাবে কর্মবিরতি চালাতে পারতেন?’ এক ব্যক্তির প্রশ্ন, ‘এটাই কি তাহলে সহ্য করে যেতে হবে?’ আর একজনের জিজ্ঞাসা, ‘আর কতদিন এমন চলবে?’ আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্নামঞ্চে প্রতিবাদের ঝড় উঠছে সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা। মঙ্গলবার তার ঠিক ঢিল ছোড়া দূরে ট্রমা সেন্টারে চালু হওয়া হাসপাতালের ইমারজেন্সির সামনে বা গাইনি বিভাগের মুখে দাঁড়িয়ে এভাবেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন রোগীর বাড়ির লোকজন। তাঁদের মুখ-চোখ দেখে বোঝাই যাচ্ছিল, লাগাতার কর্মবিরতির জেরে নাজেহালের একশেষ মানুষগুলো বহুকষ্টে ধৈর্য ধরে রেখেছেন। 

    ঘটনা ১—অশীতিপর কানন ঘোষকে নিয়ে মূল ইমারজেন্সি থেকে ট্রমা কেয়ার ইমারজেন্সির দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর দুই মেয়ে। তুমুল ভাঙচুর হওয়ার পর থেকে মূল ইমারজেন্সি বন্ধ। রাস্তাটি অমসৃণ বলে বারবার ধাক্কা খাচ্ছিল কানন ঘোষের ট্রলির চাকা। তাঁর মেয়ে রিঙ্কি মণ্ডল বললেন, ‘হাসপাতালের কি অবস্থা হয়েছে বলুন তো! মা হাই সুগারের রোগী। আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছেন। জ্ঞান নেই বললেই হয়। দমদমে থাকি আমরা। এমন অবস্থায় আনাও যে কি রিস্ক! কোনওরকমে এলাম। জানি না কী পরিষেবা পাব। হাসপাতাল তো দেখছি খাঁ খাঁ করছে!’ ট্রমা ইমারজেন্সির র‌্যাম্পে কাননদেবীর ট্রলি ঠেলে তুলছিলেন সঙ্গে থাকা এক ব্যক্তি। দুই মেয়েই ঘুরে গিয়ে বললেন, ‘দেখুন ওঁরা যে ইস্যুতে আন্দোলন করছেন, তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন আছে আমাদের। কিন্তু কাজ বন্ধ কেন? পরিষেবা দিয়েও তো আন্দোলন করা সম্ভব। আমরা গরিব মানুষ। হাসপাতালে স্ট্রাইক করলে কোথায় যাব আমরা?’

    ঘটনা ২—গাইনি বিভাগের সামনে মনমরা হয়ে বসেছিলেন উল্টোডাঙার বাসিন্দা শুভজিৎ বসু। তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছিলেন হাতিয়ারার বাসিন্দা আনসার আলি। দু’জনের স্ত্রীয়েরই সন্তান জন্ম নিয়েছে। আনসারের সন্তান সুস্থ আছে। শুভজিতের সন্তানের হার্টে ফুটো ধরা পড়েছে। খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বাচ্চাটির। ভেন্টিলেশনে আছে। মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসছে। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত শুভজিৎবাবু বললেন, ‘আমাদের প্রথম সন্তান। কী হবে জানি না। সিনিয়র ডাক্তারবাবুরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। ফাঁকা ওয়ার্ড। চারদিকে রোগীর থেকে পুলিস ও আধা সেনা বেশি দেখছি। আর কত নিরাপত্তা চাই জুনিয়র ডাক্তারদের?’ পেশায় রাজমিস্ত্রি আনসার বললেন, ‘দেখুন, সরকারি হাসপাতালকে ধরেই আমাদের বেঁচে থাকা। যাঁরা দিনরাত মিছিল করছেন, তাঁদের অনেকেরই বাড়িতে টাকা-পয়সার অভাব নেই। সরকারি হাসপাতাল বন্ধ হলে তাঁদের কিচ্ছু যায় আসে না। অসুখ বিসুখ হলে প্রাইভেটে দেখাবেন। আমরা যাব কোথায়?’ তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন দস্তানার কারিগর নুরাবুদ্দিন। বললেন, ‘ডাক্তারদের দাবি ন্যায্য। কিন্তু কাজ করে কি দাবি জানানো যেত না? হাজার হাজার গরিব মানুষকে কষ্টে রেখে তবে জানাতে হবে দাবি? প্রাইভেট হাসপাতালে এরকম টানা কর্মবিরতি করতে পারতেন ওঁরা?’ 
  • Link to this news (বর্তমান)