দেবব্রত দাস, পাত্রসায়ের: ফি বছর দলমা থেকে হাতির দল পশ্চিম মেদিনীপুর হয়ে হামেশাই ঢুকে পড়ে বাঁকুড়ায়। বছরের অর্ধেক সময়ে হাতির দল ঘোরাফেরা করে বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত বনবিভাগ ও বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের বিভিন্ন জঙ্গলে। হাতির দল তো শুধু জঙ্গলেই ঘুরে বেড়ায় না। খাদ্যের সন্ধানে মাঝে মাঝেই হানা দেয় জঙ্গল লাগোয়া জমিতে, লোকালয়ে। আর হাতির আক্রমণে প্রাণহানির একাধিক ঘটনা ঘটে। তার জেরে গ্রামের মানুষের তাড়া খেতে হয় হাতিদের। এবার তাই দলমার দামালদের দাপাদাপি কমাতে একটি বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে বনদপ্তর। হাতি ও মানুষের সংঘাত রুখতে বনদপ্তরের পক্ষ থেকে নয়া উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হাতিদের জঙ্গলের একটি বিশেষ এলাকায় আটকে রাখার জন্য বাঁকুড়ার সোনামুখী রেঞ্জের জঙ্গলে ‘হাতির বিকল্প খাদ্যের জোগান’ তৈরি করা হয়েছে। সোনামুখী রেঞ্জের হামিরহাটি বিটের রামপুর এলাকার জঙ্গলে ১০ হেক্টর জায়গা জুড়ে এই ফুড প্ল্যাটেশন প্রজেক্ট তৈরি হয়েছে। এরফলে খাদ্যের সন্ধানরত হাতির দল এখানেই তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যের সংস্থান পাবে বলে আশাবাদী বনদপ্তর।
বনদপ্তরের সোনামুখী রেঞ্জের আধিকারিক নিলয় রায় বলেন, “দলমা থেকে হাতির দল প্রতি বছর পশ্চিম মেদিনীপুর হয়ে জয়পুর, বিষ্ণুপুরের জঙ্গল পেরিয়ে পাত্রসায়ের, সোনামুখী, বেলিয়াতোড়, বড়জোড়া, গঙ্গাজলঘাটি রেঞ্জের জঙ্গলে ঘোরাফেরা করে। জঙ্গলে খাদ্যের অভাব দেখা দিলেই তারা বিভিন্ন এলাকায় জমিতে নেমে ফসল খেয়ে নেয়। লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। হাতির দল খাদ্যের জন্যই এসব করে। তাই হাতিদের জন্য আমাদের সোনামুখী রেঞ্জের হামিরহাটি বিটের রামপুর এলাকায় ‘হাতির বিকল্প খাদ্যের জোগান’ এর জন্য ১০ হেক্টর এলাকায় একটি প্ল্যানটেশন করা হয়েছে।’’ এখানে বট, কদাবেল, চালতা, কাঁঠাল, চেপ্টিঘাস, বেল, মহুল, অর্জুন, আম, শাল, কাচমোলা, বহড়া, কাজু সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১৭ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এগুলি সবই হাতিদের প্রিয় খাবার। হাতিদের জঙ্গলে খাদ্য সংস্থানের জন্যই এই বিশেষ উদ্যোগ বনদপ্তরের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, দলমার হাতির দল বছরের একাধিক সময়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গল পেরিয়ে বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। হাতির দল এলেই জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে ত্রাহি ত্রাহি রব পড়ে যায়। হাতির দল শুধু তো জঙ্গল পথেই যাতায়াত করে না। অনেক সময়ে দলে হাতির সংখ্যা বেশি হলেই ধান জমি, সবজি জমির উপর দিয়ে একাধিক গ্রামের ভিতর দিয়ে চলে যায়। হাতির হানায় ফসলের পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। আর দীর্ঘদিন একই জঙ্গলে থাকলে হাতির দল খাদ্যের সন্ধানে আবার লোকালয়ে হানা দেয়। এরফলে গ্রামের মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। হাতিদের নিয়ে নাস্তানাবুদ হতে হয় গ্রামের মানুষকে। তাই জঙ্গলে ঘোরাফেরা করা হাতির দলকে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় আটকে রাখার জন্যই এই প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে বলে বনদপ্তরের দাবি।
বনদপ্তরের সোনামুখী রেঞ্জের আধিকারিক নিলয় রায় আরও বলেন, “খাদ্যের জন্যই হাতির দল জঙ্গল ছেড়ে ধান জমিতে, বিভিন্ন সবজি ফসলের জমিতে নেমে পড়ে। লোকালয়ে ঢুকেও খাবারের সন্ধান করে। আর হাতির উপস্থিতিতে গ্রামে আতঙ্ক তৈরি হয়। ভীত সন্ত্রস্ত গ্রামের মানুষ হাতিদের দেখে তেড়ে যান। এরফলে হাতি ও মানুষের মধ্যে সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হয়। হাতিদের প্রিয় চেপ্টি ঘাস তৈরি করে লাগানো হয়েছে। এই প্ল্যানটেশনের জন্য হাতিদের খাদ্যের সংস্থান অনেকটাই পূরণ হবে বলে আমরা আশাবাদী।”