• বন্‌ধ প্রত্যাখ্যান, জেলায় জেলায় বিক্ষিপ্ত হিংসা সত্ত্বেও পথে মানুষ
    বর্তমান | ২৯ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘লাশ’ খুঁজতে আসা ‘ভেকধারী ছাত্রদের’ নবান্ন অভিযান ব্যর্থ হতেই ১২ ঘণ্টার ‘কর্মনাশা’ বাংলা বন্‌঩ধের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। বুধবার রাস্তায় নেমে সেই বন্‌ধ প্রত্যাখ্যান করলেন সাধারণ মানুষ। ব্যবসায়ী, খেটে খাওয়া লোকজন, চাকুরিজীবী আর পড়ুয়ারা কেউই ধর্মঘটে শামিল হননি। তবে দিনটিকে কর্মনাশা করতে চেষ্টার কসুর করেনি পদ্মপার্টি। জোর করে ব্যবসায়িক কেন্দ্র, বাজার-হাট বন্ধ করা, রেল ও রাস্তা অবরোধ, যানবাহন ভাঙচুর, সরকারি বাসে আগুন লাগানো এবং পুলিসকে আক্রমণ চলে দফায় দফায়। কিন্তু উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ, কোথাও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ আবার কোথাও শাসকদল তৃণমূলের সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিরোধে ভেস্তে যায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সেই চেষ্টা। স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে উত্তরবঙ্গের চা-বাগানগুলিতে। অনেক জায়গায় আবার শক্তহাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে পুলিস। রাজ্য পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্‌঩ধে গোলমাল, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, দোকানপাট জোর করে বন্ধ করার অভিযোগে ১০৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কলকাতা পুলিসের এলাকায় ধৃতের সংখ্যা ৭৬। বন্‌ধ সমর্থকদের অবরোধের জেরে, কোথাও আবার ওভারহেড লাইনে কলাপাতা ফেলার জেরে এদিন শিয়ালদহ এবং হাওড়া ডিভিশনে বাতিল করতে হয় ১০০টি লোকাল ট্রেন। এর মধ্যে ৯০টিই শিয়ালদহ ডিভিশনে। অবরোধের জেরে দূরপাল্লার ট্রেনগুলিও দেরিতে চলাচল করেছে। 

    বিজেপির ডাকা বন্‌ধ ঩নিয়ে এদিন কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব঩ন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার মেয়ো রোডে দলের ছাত্র সংগঠনের জমায়েত মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘ছাত্রদের বড় কর্মসূচি রয়েছে, তা জেনেশুনেই বন্‌ধ ঩ডেকেছে বিজেপি। বন্‌঩ধের রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা চালাচ্ছে ওরা। বাস ভাঙচুর করেছে, পুলিসকে আক্রমণ করেছে, রেলের সিগন্যাল ইচ্ছে করে দেরি করানো হয়েছে। আমি ধিক্কার জানাই।’ অভিষেকের কথায়, ‘বন্‌ধ করে বাংলাকে অচল করার বিরুদ্ধে আমরা। আজ শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিতে যে সমাবেশ হয়েছে, তাতে বিজেপিকে বলব, প্রতিবছর এই দিনে বন্‌ধ ডাকা হোক। টের পেয়ে যাবে। রাস্তায় নেমে বন্‌ধ প্রতিহত করেছে মানুষ।’ 

    বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের অবশ্য দাবি, বন্‌ধ ঩ছিল সর্বাত্মক ও স্বতঃস্ফূর্ত। রাজ্য প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল বন্‌ধ ব্যর্থ করার মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু মানুষ তা উপেক্ষা করেই বন্‌ধ পালন করেছে। বকলমে নবান্ন অভিযান কিংবা সরাসরি ধর্মঘটের পর আর জি কর কাণ্ড নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ‘ভেসে’ থাকতে আরও একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে মঞ্চ বেঁধে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে অবস্থানে বসছে পদ্মপার্টি। পরদিন, শুক্রবার রাজ্য মহিলা কমিশনের অফিসে তালা ঝোলানোর কর্মসূচি পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী ২ সেপ্টেম্বর প্রতিটি জেলাশাসকের অফিস ঘেরাও, ৪ তারিখ ব্লক অফিসে ধর্না এবং ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে বেলা ১২টা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত ‘চাক্কা জ্যামের’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিজেপি।

    এদিনের ডাকা বন্‌ধ সফল করতে পদ্মপার্টি সবচেয়ে বেশি আগ্রাসী হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরে। দিনের সবচেয়ে বড় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে এখানেই। জেলার দীঘাগামী সড়কের নাজিরবাগানে দু’টি সরকারি বাস আটকানো হয়। তারপর যাত্রীদের নামিয়ে একটিতে ভাঙচুর ও অপরটিতে আগুন লাগায় বিজেপি কর্মীরা। পরিস্থিতি সামলাতে বেধড়ক লাঠিচার্জ করে পুলিস। নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ায় বন্‌ধ সমর্থকরা মিছিল করে গিয়ে চণ্ডীপুর-নন্দীগ্রাম সড়ক অবরোধ করে। তাদের হটাতে গেলে আক্রমণ করা হয় পুলিসকে। প্রথমে লাঠিচার্জ ও পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে মারমুখী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করা হয়। পুলিসের এহেন ‘কড়া অবস্থানে’র প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার রেয়াপাড়া ফাঁড়িতে তালা ঝোলানোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে পদ্মপার্টি। 

    আবার হুগলির মানকুণ্ডু, চন্দননগর ও হিন্দমোটরে রেল অবরোধ করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে বিজেপি-তৃণমূলের। বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ভাটপাড়ায় দুই বিজেপি নেতার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ সামনে এসেছে। ঘটনায় জখম দু’জন হাসপাতালে ভর্তি। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার এলাকায় কখনও সিপিএম-তৃণমূল, আবার কখনও বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ হয়েছে। এছাড়া পার্টি অফিসে অগ্নিসংযোগ, বেশ কয়েকটি বাইক ভাঙচুর, কোচবিহারের মাথাভাঙায় সরকারি বাস ভাঙচুর এবং শিলিগুড়ি শহরে স্কুল পড়ুয়াদের বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে এদিনের বন্‌঩ধে।     
  • Link to this news (বর্তমান)