• ‘ছাত্রদের’ ইটে দৃষ্টি হারানোর পথে সার্জেন্ট, জাস্টিস চায় পুলিস মহল
    বর্তমান | ২৯ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’-এর মতো কোনও স্লোগান ছিল না। ছিল না কোনও বিক্ষোভ। তবুও বুধবার সকাল থেকে রাজ্যজুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পুলিসের নীরব প্রতিবাদ নজর কেড়ে নিল। হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুক খুললেই ভেসে এসেছে সাদা উর্দিতে রক্তাক্ত অসহায় পুলিস অফিসারের একহাতে চোখ আগলে থাকা ছবিটা। তিনি কলকাতা পুলিসের সার্জেন্ট দেবাশিস চক্রবর্তী। নবান্ন অভিযানে ‘ছাত্র সমাজে’র ছোঁড়া ইটে সম্ভবত চিরকালের মতো দৃষ্টি হারাতে বসেছেন এই অফিসার। লালবাজার জানিয়েছে, দেবাশিসের বাম চোখের রেটিনা এবং কর্নিয়া দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত। তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য হায়দরাবাদে পাঠানো হবে তাঁকে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, আহত পুলিস অফিসারের চিকিৎসায় যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করবে রাজ্য সরকার। তাঁর উপর হামলার ঘটনায় দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। সরকারি কর্তব্য পালন করতে গিয়ে এমন মর্মান্তিক পরিণতি এক লহমায় মিলিয়ে দিয়েছে কলকাতা ও রাজ্য পুলিসকে। বুধবার হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুক খুললেই ভেসে এসেছে সাদা উর্দিতে রক্তাক্ত অসহায় দেবাশিসের একহাতে চোখ আগলে থাকা ছবিটা।     

    এদিন মুকুন্দপুরের হাসপাতালের বেডে বসে ভিডিওবার্তায় দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন, ‘মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযানে ডিসি (ইস্ট) অরিশ বিলালের টিমে ছিলাম। ডিসির নির্দেশে ১১ নম্বর ফার্লং গেট থেকে বাবুঘাটের দিকে যাচ্ছিলাম আমরা। আচমকাই রেড রোডে পুলিসের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে শুরু করে বিক্ষোভকারীরা। প্রথম ইটটাই গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনের কাঁচ ভেঙে আমার চোখে এসে লাগল। বাঁ চোখ থেকে অঝোরে রক্ত পড়ছিল। তারপর আর ওই চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছি না। রাতেই জরুরি ভিত্তিতে চোখে অপারেশন করা হয়েছে।  জানি না আর কোনও দিন ওই চোখে দেখতে পাব কি না!’ হাহাকারের মতো শুনিয়েছে তাঁর শেষ বাক্য। এদিন বিকেলে তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যান কলকাতা পুলিস কমিশনার বিনীত গোয়েল।

    চন্দননগরের পুলিস কমিশনার অমিত জাভালগি থেকে দার্জিলিং রেঞ্জের ডিআইজি জয়িতা বোস, রায়গঞ্জ রেঞ্জের ডিআইজি সুধীর কুমার নীলকান্তম থেকে কলকাতা পুলিসের ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মা—সবার হোয়াটসঅ্যাপের ‘ডিপি’ বা ‘ডিসপ্লে পিকচার’ এদিন দেবাশিসের রক্তাক্ত  ছবি। না, পুলিসের কর্তাদের কোনও নির্দেশ ছিল না। কিন্তু সহকর্মীর রক্ত ঝরতেই পদের ভেদাভেদ ভুলে একাকার কনস্টেবল থেকে আইপিএস। সাম্প্রতিক কালে তো বটেই, অতীতেও এমন নজির স্মরণে নেই প্রাক্তন পুলিস কর্তাদের।
  • Link to this news (বর্তমান)