• কর্মবিরতিতে ছুটির মেজাজ আর জি করে, শূন্য আউটডোরে ভাতঘুম কর্মীদের
    বর্তমান | ২৯ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: কেউ ভাত ঘুমে ডুবে। দু-একজন মোবাইলে ওটিটি খুলে সিনেমা দেখছেন। টিকিট কাউন্টারে বসে খোশগল্পে মশগুল অনেক কর্মী। কোনও কাউন্টারে পড়ে রয়েছে ফাঁকা চেয়ার-টেবিল। দেখে কে বলবে, এটি হল আর জি কর! সবমিলিয়ে বুধবার প্রায় রোগীহীন আর জি করে ছুটির আমেজে দিন কাটালেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। আউটডোর ফাঁকা পেয়ে বিকল পাখা-আলো মেরামত করলেন সাফাইকর্মীরা। ছাদ-দেওয়ালের ঝুল ঝাড়লেন। এরমধ্যেও হাতেগোনা কয়েকজন রোগী এলেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়েছে বহুক্ষণ।’

    সকাল-দুপুর-বিকেল, আর জি করের আউটডোরে পা ফেলা যেত না কিছুদিন আগে পর্যন্ত। শ্বাস ফেলার ফুরসত পেতেন না চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা। হাজার হাজার রোগী ভিড়ে পরিপূর্ণ থাকত আউটডোর। বর্তমান অবস্থায় আর জি করের হাল যে কোনও গ্রামের ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকেও লজ্জা দেবে। 

    বুধবার সকাল ১১টা ২৬মিনিট। আউটডোরের চারতলার চক্ষুবিভাগ খাঁ খাঁ করছে। ৪০১, এ কাউন্টারে টিকিট এন্ট্রির জন্য রাখা চেয়ারে বসে দিব্যি ভাত ঘুম দিচ্ছেন এক কর্মী। বেশ কয়েক বার ডাকার পর চোখ খুললেন। একরাশ বিরক্তি নিয়ে জানতে চাইলেন, ‘কি প্রয়োজন?’ ‘রোগী কেমন আসছে,’ এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘ভিতরে গিয়ে চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করুন।’ ফের টেবিলে মাথা রাখলেন। তাঁর কাছে বসে থাকা হাসপাতালের এক নিরাপত্তা কর্মী বললেন, ‘আসলে রোগীই তো আসছে না। শুধু চুপচাপ আর কত বসা যায় বলুন!’  ওই ফ্লোরের অপর একটি কাউন্টারে দীর্ঘ সময় কাউকে দেখাই গেল না। এক রোগী এসে খোঁজ করে কাউকে না পেয়ে ঘুরে নীচে চলে গেলেন।

    ১১টা ৩৭মিনিট। ওপিডির সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরির একাধিক চেয়ার-টেবিল ফাঁকা। এক-দু’জন রোগী প্রেসক্রিপশন হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। দুপুর ১২টা ২৫মিনিট। মেডিসিন ওপিডি কার্যত ফাঁকা। ভিতরে নিরাপত্তা কর্মী ও চিকিৎসক বসে রয়েছেন। দাঁড়িয়ে আছেন একজন মাত্র রোগী। কিছু সময় পর রোগী না থাকায় চিকিৎসক গেলেন বেরিয়ে। রোগী নেই বলেই ওপিডির মধ্যে সিঁড়ি বসিয়ে পাখা পরিষ্কার ও লাইট লাগানোর কাজ করলেন পূর্তদপ্তরের কর্মীরা।

    দুপুর সাড়ে ১২টায় অর্থোপেডিক ওপিডির চিত্র একই। কোনও রোগী নেই। সাফাই কর্মীরা মেঝে পরিষ্কার ও ঝুল ঝাড়ার কাজ করতে ব্যস্ত। ওই সময় ওপিডি বিল্ডিংয়ে ঢোকার মুখে টিকিট কাউন্টারের সামনেও কোনও রোগী নেই। সিংহভাগ কাউন্টার বন্ধ। এক কর্মী খোশগল্প করছেন সহকর্মীর সঙ্গে। মাঝে মধ্যে রোগী এলে টিকিট দিচ্ছেন। সব কিছু ফাঁকা থাকায়, রথ দেখা কলা বেচার মতো অনেক সিআইএসএফ জওয়ানও এদিন সুযোগ বুঝে আউটডোরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেন।
  • Link to this news (বর্তমান)