এই সময়: রাজ্যে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে ৫০ শতাংশ আসনে মহিলা সংরক্ষণ লাগু হয়েছে আগেই। এ বছরের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশের বেশি মহিলা রয়েছেন। পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা স্তর পর্যন্ত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে মহিলাদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ার পর এ বার ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মেয়েদের অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে চাইছে তৃণমূল।রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ৫৫ শতাংশ আসন মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত রাখার পক্ষে সওয়াল করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে প্রায় আট বছর সার্বিক ভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। এ বছর পুজোর মরশুমের পর ধাপে ধাপে ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুরু করার ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগামী দিনে যখন এই নির্বাচন হবে, সেই সময়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ যাতে তাদের প্রার্থী তালিকায় ৫৫ শতাংশ প্রার্থী ছাত্রীদের করে, তার জন্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যকে বুধবার পরামর্শ দিয়েছেন অভিষেক।
এ দিন মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির সামনে টিএমসিপি-র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সভায় অভিষেক বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব, আগামী দিনে ছাত্র সংসদ নির্বাচন যখন হবে, তখন ৫৫ শতাংশ আসনে মেয়েরা, বোনেরা, দিদিরা যাতে লড়াই করার সুযোগ পান, তা সুনিশ্চিত করা হোক। ভাই তৃণাঙ্কুরকে বলছি, আগামী দিনে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে যাতে ৫৫ শতাংশ আসনে মেয়েরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে, তার সুযোগ তৃণমূল ছাত্র পরিষদকে করে দিতে হবে।’
রাজ্যে যে হেতু ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে ৫০ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণ বাস্তবায়িত হয়েছে, তাই ছাত্র সংসদের ক্ষেত্রেও ৫৫ শতাংশ সংরক্ষণ লাগু করা অসম্ভব নয় বলে মনে করছেন অভিষেক। এটা চালু হলে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী রাজ্যে পরিণত হবে বলে অভিষেকের বক্তব্য।
তাঁর কথায়, ‘বাংলা যা আজ ভাবে, গোটা দেশ তা আগামী দিনে ভাবে। বোনেদের-দিদিদের যে এই সুযোগ দিতে পারি, সেটা বাংলা পঞ্চায়েত স্তরে করে দেখিয়েছি। পঞ্চায়েত স্তরে ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ করে আমরা দেখিয়েছি। লোকসভায় আমরা করে দেখিয়েছি। ২৯ জন সাংসদের মধ্যে ১২ জন মহিলা প্রতিনিধি। বিজেপি মহিলা সংরক্ষণ বিল এনেছিল, কিন্তু লবডঙ্কা ছাড়া কিছু করেনি।’
অভিষেকের এই প্রস্তাব নিয়ে এসএফআই নেতা সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘মেয়েদের সংরক্ষণ বৃদ্ধি পেলে আমাদের নীতিগত আপত্তি নেই। তবে এই প্রস্তাব সম্পূর্ণ স্টান্টবাজি। ছাত্র সংসদ নির্বাচনই যেখানে শিকেয় তুলে দেওয়া হয়েছে, সেখানে সংরক্ষণের কথা বলা আসলে নজর ঘোরানোর চেষ্টা। আগে ক্যাম্পাসে মেয়েদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’
এবিভিপির দক্ষিণবঙ্গের রাজ্য সম্পাদক অনিরুদ্ধ সরকারের বক্তব্য, ‘গত পাঁচ বছর ধরে ভোট হচ্ছে না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগে জবাব দিন, কেন ভোট হচ্ছে না। আমাদের ৫৫ শতাংশ সংরক্ষণে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু যেখানে ছাত্র সংসদের নির্বাচন তুলে দেওয়া হয়েছে, সেখানে এই সংরক্ষণের কথার কোনও অর্থ নেই।’
গত কয়েক বছর ধরেই বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি ছাত্র ভোটের পক্ষে সওয়াল করছে। রাজ্য সরকার যে এবার ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে চাইছে, সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেয়ো রোডে টিএমসিপি-র সভায় মমতা বলেন, ‘আমি মনে করি, ছাত্রদের নির্বাচন হওয়া উচিত। এখন সিস্টেম চেঞ্জ হয়েছে। আগে ছিল, ফার্স্ট-ইয়ার, সেকেন্ড-ইয়ার, থার্ড-ইয়ার। এখন সেমেস্টার হয়েছে। ব্রাত্য বসুকে (শিক্ষামন্ত্রী) বলব, একটি টাইম টেবিল তৈরি করতে। পুজো হয়ে যাক। তারপর নির্বাচনগুলো আস্তে আস্তে করিয়ে দেবো।’ রাজ্যে প্রায় সাড়ে চারশো কলজে ও ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বকেয়া পড়ে রয়েছে।