এই সময়: রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে একাধিক দপ্তরের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তিনি বলেন, ‘আমার কাছে প্রত্যেক জেলা থেকে রিপোর্ট আসছে। সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে।’ আইন, সেচ, পঞ্চায়েত, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তরের মন্ত্রীদের প্রতি প্রবল উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি। সবচেয়ে বেশি ভৎর্সনার মুখে পড়েন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক।মলয়কে মুখ্যমন্ত্রী কড়া ভাবে বলেন, ‘আপনি যদি চালাতে না পারেন, আমি ফেরত নিয়ে নেব। আইন নিয়ে কী করছেন? বন্ধ নিয়ে কিছু তো করতে পারলেন না?’ এরই পাশাপাশি মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘আরজি করের ঘটনাকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশ ধৈর্য্য দেখিয়েছে।’
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর তোপের মুখে পড়েন রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি ও পূর্তমন্ত্রী পুলক রায়ও। বৈঠকে পুলককে লক্ষ্য করে তিনি জানতে চান, ‘কী করছ তুমি? বর্ধমানে তোমার পিএইচই-র কাজ নিয়ে অভিযোগ আসছে। ওখানে রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে। অথচ সারাইয়ের কাজ হচ্ছে না। এমন অভিযোগও জমা পড়ছে।’ বাদ পড়েনি পঞ্চায়েত ও সেচ দপ্তরও। দুই বিভাগের কাছে অবিলম্বে স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশও দেন তিনি।
এমনকী, পরিষেবা ব্যহত হলে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। বুধবারের বৈঠকে পুলিশ, দমকল সহ আরও চারটি দপ্তরে মোট ৬৭৩টি নতুন পদের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে রাজ্য পুলিশের জন্য ৪৯৪ জন নতুন সাব ইনস্পেক্টর এবং দমকলের জন্য ১২২টি নতুন পদ তৈরি করা হয়।
এদিনের মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওডিশায় কাজ করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের হেনস্থা হওয়ার প্রসঙ্গ ওঠে। পাশের রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে এরাজ্যের শ্রমিকদের বাংলাদেশী সন্দেহে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে। বহু পরিযায়ীকে স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে ওঠায় কাজ ছেড়ে ঘরে ফিরে আসতে হচ্ছে। আধার, প্যান, ভোটার কার্ড দেখিয়েও স্থানীয়দের ক্ষোভের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না এ রাজ্যের বাসিন্দারা।
সরকারি সূত্রের খবর, বাংলার বাসিন্দাদের অনেকে ওডিশায় গিয়ে হাটবাজারে বিভিন্ন জিনিস ফেরি করেন কিংবা ছোট বড় সংস্থায় বা ঠিকাদারের কাছে লেবারের কাজ করেন। কেউ আবার ব্যবসাও করেন। এর বাইরেও বাংলার বহু মানুষ ওই রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন।
এরা মূলত বীরভূম, মালদা, মুর্শিদাবাদ বা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা। বুধবারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে ওডিশা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকে। প্রসঙ্গত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে গত ১১ অগস্ট ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝিকে ফোন করে অবগত করেন। এতেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি।