এই সময়: তাঁদের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন থাকলেও আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার জন্য বারবার অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট আরজি করের ঘটনার প্রেক্ষিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেও তাঁদের কাজে ফিরতে একাধিক বার বার্তা দিয়েছে। তারপরেও রাজ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি অব্যাহত।বুধবার আন্দোলনকারী ডাক্তারদের সাধারণ মানুষের কথা ভেবে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আবারও আর্জি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। ডাক্তাররা কাজে যোগ না-দিলে কী ধরনের আইনি সংস্থান রয়েছে— মেয়ো রোডের সভা থেকে তাও জানিয়েছেন মমতা। এর পিছনে প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারিও আছে বলে মনে করছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের বড় অংশ। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পরেও তাঁরা আন্দোলন জারি রাখার কথা জানিয়েছেন।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, ‘ধীরে ধীরে কাজে ফিরুন। কোনও ব্যবস্থা নেব না চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে।’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান থেকে কর্মবিরতিতে থাকা জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশে তাঁর সংযোজন, ‘আপনারা আন্দোলন করেছেন। আপনাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা আমি নেব না। কারণ, আমি জানি, আপনাদের দুঃখ থাকতে পারে, অভিমান থাকতে পারে, ক্ষোভ থাকতে পারে, আপনারা বিচার চাইছেন। কিন্তু এ বার আস্তে আস্তে জয়েন করুন।’
আইনি সংস্থানের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু সে দিন বলেছিল, রাজ্য সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া হলো টু টেক অ্যাকশন। কিন্তু আমি অ্যাকশন নিতে চাই না। তার কারণ, আমি চাই, ওঁরা ভালো করে পড়াশোনা করুন। আমি যদি কারও বিরুদ্ধে এফআইআর করি, তাঁর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে, তিনি আর কোথাও চান্স পাবেন না। তাঁর পাসপোর্ট হবে না, ভিসা পাবেন না।’
তৃণমূলের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি এবং বিজেপি-র ডাকা বন্ধ উপেক্ষা করেই এ দিন হাজারো মানুষ পা মিলিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা মিছিলে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ, ছাত্রছাত্রী, বুদ্ধিজীবী, শ্রমিক এবং অভিভাবকদের আহ্বান জানানো হয়েছিল ন্যায়বিচারের দাবিতে শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত আয়োজিত এই মিছিলে সামিল হতে। তাতে স্বাভাবিক ভাবেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় সামিল হয়েছিলেন চিকিৎসক, নার্স এবং ডাক্তারি ও নার্সিং পড়ুয়ারা। মিছিলের অঙ্গ হিসেবেই ছিল পথনাটিকা, মূকাভিনয়।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আন্দোলকারী জুনিয়র ডাক্তারদের সামগ্রিক বক্তব্য, ‘আমরা তো ডাক্তার হয়েছি মানুষের সেবা করার জন্যই। কাজে তো আমরাও ফিরতে চাই। কিন্তু আগে আমাদের দাবি মেনে মুখ্যমন্ত্রী অ্যাকশন নিন। সন্দীপ ঘোষকে সাসপেন্ড করুন, বিনীত গোয়েলকে (সিপি) পদত্যাগ করতে বলুন। আমাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়ার আগে ওঁদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিন মুখ্যমন্ত্রী। তা হলেই তো আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেবো।’ তাঁরা জানাচ্ছেন, রাজ্যের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার স্বার্থে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত স্বাস্থ্য প্রশাসনের দাবিও তাঁরা তুলে আসছেন লাগাতার।
ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীদের মিছিলের প্রতি যে তাঁর সমর্থন আছে, তা মেয়ো রোডের সমাবেশ থেকেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতার কথায়, ‘আজকেও (বুধবার) জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল আছে। আমি চাই, তাঁরা ভালো করে করুন। আমার সমর্থন তাঁদের প্রতি ছিল, আছে, থাকবে। তাঁরা অনেক পরিষেবা দেন। একইসঙ্গে আমি বলব, আপনারা তো মানবিক, আপনারা তো অঙ্গীকারবদ্ধ মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য। সুপ্রিম কোর্টও অনুরোধ করেছে, সবাইকে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য।’
তাঁর সংযোজন, ‘অনেক মানুষ পরিষেবা না পেয়ে মারা গিয়েছেন। এরা গরিব লোক। যারা বড়লোক, কোটিপতি, অনেক টাকা আছে, তারা প্রাইভেট হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট করতে পারে। কিন্তু যারা গরিব লোক, তারা পারে না। কোথায় যাবে, বলুন তো?’ প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি মাখানো মুখ্যমন্ত্রীর এই আবেদনে অবশ্য খুব একটা কাজ হয়নি এ দিন। উল্টে জুনিয়রদের পাশাপাশি সিনিয়র ডাক্তারদের একাংশের মধ্যেও মুখ্যমন্ত্রীর বার্তায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে। চিকিৎসক সংগঠনগুলি মূলত ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীর ‘ব্যবস্থা নিতে পারি, কিন্তু নিচ্ছি না’ গোছের মন্তব্যে।