• হলদিয়ায় বন্‌ধের সমর্থনে ঝান্ডা ধরার লোক নেই বিজেপির, সচল শিল্পাঞ্চল
    বর্তমান | ২৯ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, হলদিয়া: রাজনৈতিক মহলের কাছে হলদিয়া নাকি বিরোধী দলনেতার খাসতালুক! অথচ বুধবার, বন্‌঩ধের দিন সেই হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে ঝান্ডা হাতে মিছিল করার কর্মী খুঁজে পেল না বিজেপি। হাতেগোণা ১০-১২ জন কর্মী-সমর্থক নিয়ে বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডলের নেতৃত্বে কয়েকটি মোড়ে কারখানার শ্রমিকদের আটকানোর চেষ্টা হয়। বিজেপির লক্ষ্য ছিল, সকালের সিফ্টের কারখানার শ্রমিক কর্মচারীদের সিটি সেন্টার, রানিচক, দুর্গাচক এলাকায় আটকে দিয়ে শিল্পাঞ্চলের কাজকর্ম ব্যাহত করা। কিন্তু কর্মী না থাকায় সেই কর্মসূচি তেমন সফল হয়নি বলে হলদিয়ার বিজেপি নেতৃত্বই স্বীকার করেছে। বরং শ্রমিকরা বিজেপির এই কৌশল আগাম আঁচ করেই আগাম মর্নিং সিফ্টে কারখানায় হাজির হয়ে যান। বিজেপির গুটিকয় কর্মী তাঁদের নাগালই পাননি। পুলিস সক্রিয় হওয়ায় শ্রমিকদের বাধা দানের কৌশল বদলে ফেলে বিজেপি। ফলে বিজেপির ডাকা বনধে হলদিয়া বন্দর, আইওসি রিফাইনারি সহ শিল্প সংস্থাগুলিতে কোনও প্রভাব পড়েনি। সংস্থাগুলির দাবি, অন্যান্য দিনের মতোই তাদের কাজকর্ম ও উৎপাদন স্বাভাবিক হয়েছে। 


    বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) প্রবীনকুমার দাস বলেন, বন্দরে এদিন ১০টি জাহাজে স্বাভাবিক পণ্য ওঠানামা করেছে, পণ্যবাহী লরিও চলাচল করেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় বন্দরে ৭টি জাহাজ ঢুকেছে এবং ৭টি পণ্য বোঝাই করে বেরিয়েছে। যদিও বিজেপির দাবি, কারখানাগুলিতে মর্নিং সিফ্টে বহু শ্রমিক কাজে যোগ দেননি। অন্যদিকে, তৃণমূলের দাবি, ব্যাঙ্ক, ডাকঘর, বিভিন্ন সরকারি অফিস, স্কুল সবই খোলা ছিল। সরকারি অফিসে কর্মীদের উপস্থিতি অন্যান্য দিনের স্বাভাবিক ছিল বলে দাবি করা হয়েছে। 


    এদিন বন্‌঩ধের জেরে রাস্তায় বেসরকারি বাসের দেখা মেলেনি। টোটো, অটো থাকলেও তা সংখ্যায় ছিল নগন্য। ফলে বাইরে থেকে শহরে লোকজনের আনাগোনা সেভাবে হয়নি। বাস বন্ধ থাকায় শহরের সিংহভাগ স্কুলেই পড়ুয়ার সংখ্যা খুব কম ছিল। এদিন শ্রমিক আটকাতে না পেরে কৌশল বদলে টাউনশিপ টার্মিনাসে গিয়ে বাস বন্ধ করা, মাখনবাবুর বাজার, দুর্গাচকের বিভিন্ন বাজারে দোকানপাট বন্ধ করতে বিজেপি জুলুমবাজি করে বলে অভিযোগ।


    বিজেপি নেতা কর্মীদের শাসানিতে এদিন ভয়ে সকাল ১০টার পর ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। হলদিয়া টাউন ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মিলন মণ্ডল বলেন, বিজেপি গুটিকয়েক লোক নিয়ে কখনও ব্যাঙ্কে ঢুকে অফিসার, কর্মীদের চমকেছে, কখনও স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের ভয় দেখিয়ে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। সরকারি কর্মীরা কিন্তু সাহসের সঙ্গে বন্‌ধ উপেক্ষা করে মানুষকে পরিষেবা দিয়েছেন। এদিন বন্‌ধেও শহরে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। বিধায়ক বিরোধী মণ্ডল নেতাদের এদিন ময়দানে দেখাই মেলেনি। হলদিয়ার বিজেপি নেতা শ্যামল মাইতি বলেন, শিল্পাঞ্চলে কর্মীরা কারখানায় কাজ করেন। কাজ হারানোর ভয়ে অনেকেই মাঠে নামতে চায়নি। ফলে বেশি লোকজন পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর অভিযোগ, পুলিস এদিন সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি নেতা কর্মীদের আটক করে মনের জোর ভেঙে দিতে চেয়েছে। এদিন শিল্পাঞ্চল লাগোয়া সুতাহাটা, হলদিয়া, মহিষাদলে বনধের মিশ্র প্রভাব পড়েছে। সুতাহাটার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অশোক মিশ্র অভিযোগ করেন, হোড়খালির গোপালচক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের স্কুলের বাইরে বের করে দিয়ে গেট বন্ধ করে বিজেপি দলীয় পতাকা টাঙিয়ে দেয় স্কুলে। চৈতন্যপুরে এদিন দু’দলের মিছিলের সময় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। মহিষাদলে গয়েশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ে ঢুকেও বিজেপি স্কুল বন্ধ করার ফতোয়া দেয় বলে অভিযোগ। একইভাবে চৈতন্যপুরে বাজিতপুর সারদামণি বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে স্কুল বন্ধ করার নির্দেশের পাশাপাশি রাস্তায় পড়ুয়ারা প্রতিবাদ মিছিল করেনি, তার জবাবদিহি চান বিজেপি নেতারা। - নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)