• ট্রেনের ধাক্কায় ছেলের মৃত্যু, ন’মাস পর একই স্থানে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী বাবা
    বর্তমান | ২৯ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কালনা: প্রায় ন’মাস আগে ট্রেনের ধাক্কায় স্কুলপড়ুয়া ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সেই শোক ভুলতে না পেরে ছেলের দুর্ঘটনাস্থলেই ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হলেন বাবা। মৃতের নাম জীবন হালদার (৪৯)। বাড়ি কালনা থানার নান্দাই আশ্রমপাড়ায়। মর্মান্তিক এই ঘটনায় পরিবার ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বুধবার কালনা মহকুমা হাসপাতালে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেয় কালনা জিআরপি। 

    স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনার নাদনঘাট থানার আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা জীবনবাবু পেশায় মৎস্যজীবী ছিলেন। তাঁর তিন ছেলে। ন’মাস আগে এক সন্ধ্যায় ট্রেনের ধাক্কায় তাঁর ছোট ছেলে বছর বারোর দীপ হালদারের মৃত্যু হয়। ছোট ছেলেকে খুবই ভালোবাসতেন জীবনবাবু। ছেলের মৃত্যুর পর থেকে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। মাঝেমধ্যেই ছোট ছেলের কথা ভেবে কাঁদতেন। মনমরা হয়ে থাকতেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ধাত্রীগ্রাম-কালীনগর স্টেশনের মাঝে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে রেললাইনে তাঁর দ্বিখণ্ডিত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে কালনা জিআরপি মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মহকুমা হাসপাতালে পাঠায়।

    বুধবার হাসপাতালে বাবার মৃতদেহ নিতে এসে জীবনবাবুর বড় ছেলে রিপন হালদার বলেন, ছোট ভাই দীপ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছিল। ট্রেনের ধাক্কায় ওর মৃত্যু হয়। তারপর থেকে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন অবসাদে ভুগত। সব সময় শুধু ছোট ভাইয়ের কথা বলত। ঘরে ভাইয়ের ছবি দেখে হাউহাউ করে কাঁদত। রেললাইনের কাছেই আমাদের বাড়ি। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ আমরা দুর্ঘটনার খবর জানতে পারি। বাবা ট্রেনে কাটা পড়ে। দেহ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গিয়েছে। আমাদের অনুমান, ভাইয়ের শোকেই মানসিক অবসাদে বাবা আত্মঘাতী হয়েছে।

    সোমবার রাতে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হওয়া যুবকের পরিচয় জানা গেল। মৃতের নাম বিশ্বজিৎ বাগ(৩৩)। বাড়ি নাদনঘাট থানার নিমতলা এলাকায়। বুধবার কালনা মর্গে এসে মৃতদেহ শনাক্ত করেন পরিবারের লোকজন। মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে টোটো নিয়ে নবদ্বীপ ভাড়া গিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। সেখানে যাত্রী নামিয়ে একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। কিন্তু চা খেয়ে টোটোটি দেখতে পাননি। পরিবারের লোকেদের ঘটনার কথা জানান। রাত পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও টোটোর সন্ধান পাননি। পরিবারের দাবি, টোটো চুরি হয়ে যাওয়ায় মানসিক চাপে ওই রাতে রেললাইন ধরে হাঁটার সময় ট্রেনের ধাক্কায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)