•  নতুন করে গড়ার দাবিতে থমকে ঝাড়গ্রামের গুপ্তমণি মন্দিরের সংস্কার, ক্ষোভ বাসিন্দাদের
    বর্তমান | ২৯ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম: ঝাড়গ্ৰামের শতাব্দী প্রাচীন গুপ্তমণি মন্দিরের সংস্কারের কাজ থমকে রয়েছে। মন্দিরটির সংস্কারের জন্য রাজ্য সরকার প্রায় এক কোটি টাকা বরাদ্দ করে। অর্থের অনুমোদন পেতেই জেলা পরিষদ মন্দির সংস্কারের কাজ শুরু করে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন, মন্দিরটি নতুন করে গড়তে হবে। এই দাবি নিয়েই জটিলতা তৈরি হয়েছে। তার জেরেই থমকে গিয়েছে সংস্কারের কাজ। নয়াগ্ৰামে রামেশ্বর মন্দির, চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা মন্দিরের সংস্কার প্রায় শেষ। গুপ্তমণির কাজ থমকে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ঝাড়গ্ৰাম জেলা পরিষদের সভাধিপতি চিন্ময়ী মারান্ডি বলেন, মন্দির সংস্কারের কাজ নিয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সেই জটিলতা সমাধানের চেষ্টা চলছে। আশা করছি জট কাটিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করা যাবে।

    তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর জেলার প্রাচীন মন্দিরগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২০ সালে গুপ্তমণি মন্দির সংস্কারের জন্য প্রায় ১ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করেছিলেন। জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে মন্দির সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়েছিল। মন্দির চত্বরে দর্শনার্থীদের জন্য থাকার জায়গা, ভোগঘর, মন্দিরের জল নিকাশি ব্যবস্থা ভালো করার জন্য প্রায় ৯০ মিটার দীর্ঘ ড্রেন ইত্যাদি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে মন্দির চত্বরে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে আলোকসজ্জার পরিকল্পনা রয়েছে। মন্দিরটি নতুন করে গড়ার দাবি ওঠায় জটিলতা তৈরি হয়। সংস্কারের কাজ থমকে যায়। মন্দির কমিটিতে জমিদাতা ও পূজারীদের একাংশকে রাখা নিয়েও বিরোধ তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের তরফেও নতুন করে মন্দির নির্মাণের দাবি নাকচ করা হয়নি। এদিকে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এই মন্দিরের কাজ বারবার থমকে যাওয়ায় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দা কালী রানা বলেন, বর্তমান মন্দিরটি প্রায় একশো বছরের পুরনো। বহু মন্দিরের ছাদ চুয়ে জল পড়ছে। দেওয়ালগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। সংস্কার করা হলে মন্দিরটি দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকতে পারবে না। আমরা চাইছি পুরনো মন্দিরের চারপাশে পিলার তৈরি করে ছাদ ঢালাই করা হোক। পুরনো মন্দিরটি ভেঙে নতুন করে গড়ার বিষয়ে পূজারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কোনও আপত্তি নেই। জেলা পরিষদ ও জেলাশাসকের দপ্তরকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। জমিদাতা ও  পূজারীদের একাংশের দাবি, নতুন করে মন্দির নির্মাণের সঙ্গে মন্দির পরিচালনার জন্য নতুন কমিটি গড়তে হবে। পূজারীদের একাংশের প্রতিনিধি রুকমনি শবর বলেন, আমরা চাই মন্দিরটি পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হোক। সেইসঙ্গে নতুন কমিটিও গড়া হোক। সরকার মন্দির সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে। কমিটির কিছু স্বার্থান্বেষী লোকের কারণে জটিলতা তৈরি হয়েছে। জমিদাতাদের তরফে সঞ্জয় মাহাত বলেন, শতাব্দী প্রাচীন মন্দিরটির সঙ্গে এই এলাকার মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। ভক্তরা দূরদূরান্ত থেকে মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। নানাবিধ কারণে মন্দিরের কাজ থমকে যাচ্ছে। কমিটিতে আমাদের কোনও প্রতিনিধি রাখা হয়নি। মন্দিরের নির্মাণ ও নতুন কমিটি গড়ার দাবি জানানো হয়েছে। আশা করি প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। 

    গুপ্তমণি মন্দিরে বনদেবী বা বনদুর্গা পাথররূপে পূজিত হন। প্রায় চারশো বছর ধরে শবর সম্প্রদায়ের মানুষরা বনদেবীর পুজো করেন। তবে বর্তমান মন্দিরটি শ’ খানেক বছর আগে নির্মিত। শবর সম্প্রদায়ের ‘দেহুরি’ বা পূজারীরা দেবীর আরাধনা করেন। - গুপ্তমণি মন্দির। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)