• পুজোর আগেই ১৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু, মেধা তালিকা প্রকাশের নির্দেশ হাইকোর্টের
    বর্তমান | ২৯ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দীর্ঘ আট বছর পর উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের জট কাটল। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে পুজোর আগেই নিয়োগ পেতে চলেছেন ১৪ হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী। বুধবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ রায় ঘোষণা করে জানিয়েছে, উচ্চ প্রাথমিকে ১৪,০৫২ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে (এসএসসি)। চার সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে। তার পরের চার সপ্তাহের মধ্যে দিতে হবে নিয়োগপত্র। রায় ঘোষণা করতে গিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ এবং উভয় দিকে ‘ভারসাম্য’ বজায় রাখার লক্ষ্যেই আদালতের এহেন সিদ্ধান্ত। রায়ের পর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছায় সিলমোহর পড়ল কলকাতা উচ্চ ন্যায়ালয়ে। উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে ১৪ হাজারেরও বেশি শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের জটিলতাও কেটে গেল। এসএসসি দ্রুততার সঙ্গে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কর্মপ্রার্থীদের মুখে হাসি ফোটাবে।’ নিয়োগের পথ চেয়ে বসে থাকা চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই খুশির হাওয়া। 

    উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। সেই মতো ওই বছরই স্টেট লেভেল সিলেকশন টেস্ট (এসএলএসটি) আয়োজিত হয়। মোট ২ লক্ষ ২৮ হাজার ৬৭৮ জন চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষায় বসেন। তিন বছর পর ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট এসএসসির তরফে ইন্টারভিউয়ের জন্য তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই বছরের ৪ অক্টোবর প্রকাশিত হয় মেরিট লিস্ট বা মেধা তালিকা। তারপরই একাধিক বেনিয়মের অভিযোগে গুচ্ছ গুচ্ছ মামলা দায়ের হয়। অভিযোগ ছিল, মেধা তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নীতি মানা হয়নি। তফসিলি জাতি এবং জনজাতিগুলির সংরক্ষণ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন ওঠে। মহিলাদের সংরক্ষণ নিয়েও ত্রুটি ছিল বলে মামলাকারীদের তরফে অভিযোগ করা হয়। পাশাপাশি, ওএমআর শিটে বিস্তর গোলযোগ রয়েছে বলে দাবি করেন মামলাকারীরা। যাবতীয় অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিলের নির্দেশ দেয় বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যের সিঙ্গল বেঞ্চ। শেষ পর্যন্ত মামলা গড়ায় ডিভিশন বেঞ্চে। সেখানে প্রায় তিন বছর মামলার শুনানি চলার পর সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ সংশোধন করে ২০২৩ সালে প্যানেল প্রকাশ করার অনুমতি দেয় বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত তখন জানিয়েছিল, প্যানেল প্রকাশ করা হলেও কাউকে নিয়োগের সুপারিশ করতে পারবে না এসএসসি। পরবর্তীকালে বিচারপতিদের বিচারক্ষেত্র পরিবর্তন হওয়ায় মামলাটি আসে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে। সেখানে অভিযোগ ওঠে, ২০২৩ সালে শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া থেকে ১ হাজার ৪৬৩ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হল, এসএসসির তরফে তা জানানো হয়নি বলেও অভিযোগ ওঠে। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর ১৮ জুলাই  মামলার শুনানি শেষ হয়। তবে রায়দান স্থগিত রাখে ডিভিশন বেঞ্চ। বুধবার সেই রায় ঘোষণা করে বেঞ্চ জানিয়ে দিল, এসএসসির তরফে ১,৪৬৩ জন প্রার্থীকে যেভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে, তা আইনের চোখে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই মোট ১৪,৩৩৯টি শূন্যপদের মধ্যে ১৪,০৫২টি পদের জন্য চূড়ান্ত মেধা তালিকা প্রকাশ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)