• ডাক্তারদের আন্দোলনের পাশে, কাজে ফেরার ডাক মুখ্যমন্ত্রীর
    বর্তমান | ২৯ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন সঙ্গত। ওঁরা মিছিল করছেন। আমার পূর্ণ সমর্থন আছে। ওঁদের বিরুদ্ধে আমরা কোনও ব্যবস্থা নিইনি। নেব না। কারণ, বন্ধুর বিচার চাইছেন ওঁরা।’ বুধবার এভাবেই জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে থাকার  বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে তাঁর আবেদন, ‘আপনারা আস্তে আস্তে কাজে যোগদান করুন। সুপ্রিম কোর্টও বলেছিল কাজে যোগ দিতে। পরিষেবা না পেয়ে অনেক মানুষ মারা গিয়েছে। যারা কোটিপতি, বেসরকারি হাসপাতালে যেতে পারে। কিন্তু গরিব মানুষ যাবে কোথায়? গর্ভবতী মহিলা বা কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই আন্দোলন নিয়ে দিল্লিতে এফআইআর হয়েছে। আমরা পদক্ষেপ নিইনি। ডাক্তাররা মানুষকে পরিষেবা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। রাজ্য সরকারের হাতে ক্ষমতা আছে। কিন্তু ব্যবস্থা নিতে চাই না। ওঁরা পড়াশোনা করুক। এফআইআর করলে ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে। পাসপোর্ট-ভিসা পাবেন না। আইনগত অ্যাকশনে ওঁদের জীবন নষ্ট হয়ে যাক, চাই না। আমাদের সরকারের মানবিক মুখ রয়েছে। আমরা আরও ডাক্তার তৈরি করতে চাই।’ 

    মেয়ো রোডের সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী যখন কথাগুলি বলছেন, সেই সময় আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা শ্যামবাজার থেকে মিছিল করে এগচ্ছেন ধর্মতলার দিকে। ধ্বনিত হচ্ছে, ‘পেরিয়ে গেল ২০ দিন, এবার দিদির বিচার দিন’, ‘বাংলাজুড়ে একটাই স্বর, জাস্টিস ফর আর জি কর’ স্লোগান। পাঁচ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রী ও তরুণ চিকিৎসকদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা—‘অভয়ার বিচার চাই’, ‘শোক নয় দ্রোহ’। চড়া রোদ ও তীব্র গরমে প্রায় ৫ কিমি রাস্তা হাঁটতে অনেকেরই কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু দমে যাননি তাঁরা। মিছিল দেখতে রাস্তার দু’পাশে ভিড় জমে যায়। বাসের যাত্রীদেরও প্রতিবাদী স্লোগানে গলা মেলাতে দেখা গেল। চিকিৎসকদের টানা কর্মবিরতি নিয়ে অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া উঠে এল সেই ভিড় থেকে। শ্যামবাজারের বাসিন্দা দেবাশিস দে বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষ ডাক্তারদের আন্দোলনের জন্য বিপদে পড়েছেন। হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসা পাচ্ছেন না, মারা যাচ্ছেন। তাঁদের বাড়ির লোকজন যদি রাস্তায় নেমে এখন বলে উই ওয়ান্ট জাস্টিস, তখন কী হবে?’ গিরিশ পার্ক এলাকার অনুপম মিশ্র, চাঁদনির অভিজিৎ সর্দাররা বললেন, ‘ডাক্তারদের দাবি সঙ্গত। তাঁদের পাশে আছি।’ ১২০০ কিমি সাইকেল চালিয়ে মথুরা থেকে আর জি করে এসে মিছিলে যোগ দিয়েছেন ধর্মোক নামে এক নার্সিং পড়ুয়া। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে গেলেন তিনি। মেডিক্যাল কলেজের সামনে আন্দোলনকারীরা পথনাটকের মাধ্যমে প্রতিবাদ করেন। মুরলীধর সেন লেনের সামনে দিয়ে মিছিল যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে গোলমাল হয়েছিল। তাই বাড়তি সতর্ক ছিল পুলিস। তবে হাঁটতে হাঁটতেই মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা মোবাইলে শুনে নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের অন্যতম নেতা ডাঃ আসফাকুল্লা নাঁইঞা বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর উপর আমরা আশা রাখি। আমাদের দাবি, সন্দীপ ঘোষকে অবিলম্বে সাসপেন্ড করুন। ঘটনায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যুক্ত প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করতে হবে। আমরা ডাক্তার। দাবি মানলে দ্রুত ডাক্তারিতেই ফিরব।’
  • Link to this news (বর্তমান)