এই সময়: আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় একই দিনে দুটি বিষয় প্রকাশ্যে আসায় নতুন করে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনটি অডিয়ো (যার সত্যতা যাচাই করেনি 'এই সময়') ভাইরাল হয়। যেখানে ৯ অগস্ট সকালে দু'টি ফোনের বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। প্রথম কলে বলা হচ্ছে, তরুণী চিকিৎসক অসুস্থ। পরবর্তী কলে জানানো হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।এ প্রসঙ্গে চিকিৎসকের মা এদিন বলেন, 'অডিয়ো ভাইরাল কোথা থেকে হয়েছে জানি না। আমরা কাউকে দিইনি।' অন্য দিকে, ফাঁস হওয়া অডিয়োর বিষয়ে কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, 'এতেই বোঝা যাচ্ছে সে দিন কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে পরিবারকে ফোন করা হয়নি।' এর কিছুক্ষণ পরে সামনে আসে সেমিনার হলে চিকিৎসকের দেহ কোনও চাদরে ঢাকা ছিল, তা নিয়ে একাধিক পরস্পর বিরোধী তথ্য।
অডিয়ো ঘিরে বিতর্ক
বৃহস্পতিবার যে অডিয়োটি সামনে এসেছে, তার প্রথমটিতে এক মহিলাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, 'ওঁর শরীর খারাপ। আপনারা একটু আসতে পারবেন?' যা শুনে উল্টোদিকের পুরুষকণ্ঠ (নির্যাতিতার বাবা) জানতে চাইছেন, 'কী হয়েছে?' উল্টোদিক থেকে জবাব আসছে, 'আমরা ভর্তি করাচ্ছি।' যা শুনে ফের বাবা প্রশ্ন করছেন, 'কী হয়েছে সেটা তো বলবেন?' পাল্টা মহিলা কণ্ঠে উত্তর দেওয়া হচ্ছে, 'ডাক্তাররা সেটা জানাতে পারবেন।'
দ্বিতীয় অডিয়ো ক্লিপে এক মহিলা বলছেন, 'আমি অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার কথা বলছি। যা জানানোর ডাক্তারবাবু জানাবেন।' তৃতীয় একটি ক্লিপে সেই মহিলাকেই আবার বলতে শোনা যাচ্ছে, 'উনি সুইসাইড করেছেন হয়তো। বা, মারা গেছেন।' এই তিনটি অডিয়ো ক্লিপ কি একই ফোনের? নাকি তা আলাদা? সেটা অবশ্য স্পষ্ট নয়।
শুরু থেকেই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মা। অভিযোগ উঠেছিল কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে আত্মহত্যার কথা বলে ফোনে খবর দেওয়া হয়েছিল বাড়িতে। যদিও লালবাজার সেই অভিযোগ খারিজ করে দেয়।
তরুণীর বাবাও পরে জানিয়েছিলেন, 'অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার' পরিচয় দিয়ে একজন ফোন করেছিলেন। এ দিনের অডিয়ো থেকে এটা অবশ্য স্পষ্ট হয়েছে, ফোন করে কলকাতা পুলিশ পরিবারকে কোনও ভুল তথ্য দেয়নি। তবে, ঘটনার পর দিন সকালে হাসপাতালের তরফে তরুণীর পরিবারকে আত্মহত্যার কথা কেন জানানো হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখছে সিবিআই।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই অডিয়ো প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, 'এর আগে আরজি কর সংক্রান্ত মামলা নিয়ে অনেক সাংবাদিক বৈঠক করা হয়েছে। সেখানে যা বলা হয়েছিল, এই অডিয়ো সে কথাই প্রমাণ করছে।'
মর্গে সিবিআই
তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা নাগাদ আরজি কর হাসপাতালের মর্গে যান সিবিআইয়ের ৫ জন অফিসার। সূত্রের খবর, তরুণী চিকিৎসকের ময়না তদন্তের সময়ে কে কে উপস্থিত ছিলেন, কতক্ষণ ধরে পুরো প্রক্রিয়া চলেছে, সে সব বিষয়ে কথা বলেন তদন্তকারীরা। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে দুর্নীতি সংক্রান্ত যে সব অভিযোগ উঠেছে তার মধ্যে অন্যতম হাসপাতালের মর্গ থেকে মৃতদেহ পাচার।
সেই সংক্রান্ত নথিও এ দিন সংগ্রহ করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসাররা। সিবিআই সূত্রে খবর, ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মর্গের সমস্ত নথি সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি, তরুণী খুনের বিষয়ে আরও তথ্য জানার জন্য বৃহস্পতিবারও সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করা হয় সন্দীপ ঘোষকে। এ নিয়ে টানা ১৪ দিন সিবিআই দপ্তরে হাজির হলেন তিনি।
অন্যদিকে, ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় হাসপাতালের দুই নিরাপত্তা রক্ষীকে দু'দিন জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। তাঁদের বক্তব্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ৯ অগস্ট রাতে হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ২ রক্ষীর পলিগ্রাফ টেস্ট করাতে চায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই মর্মে এ দিন শিয়ালদহ আদালতে আবেদন জানানো হলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। বৃহস্পতিবার রাতেই তাঁদের পলিগ্রাফ টেস্টের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।