স্বামী গুন্ডা আর স্ত্রীর রেশন দোকান! বিস্মিত হাইকোর্ট
এই সময় | ৩০ আগস্ট ২০২৪
এই সময়: গ্রামের দু’কিলোমিটারের মধ্যে কোনও রেশন দোকান নেই। তাই অবিলম্বে কাছাকাছি রেশন দোকান খোলার আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয়েছিল জনস্বার্থ মামলা। সেই রেশন ডিলারশিপ কে পাবেন, সম্ভাব্য তেমন চারজনের কথাও আদালতে জানিয়েছিলেন মামলাকারী।তার মধ্যে একজনের প্রসঙ্গ তুলে মামলাকারী জানিয়েছিলেন, ওই আবেদনকারীর স্বামী এলাকার একজন গুন্ডা। তারপরই প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বিস্ময়ের সুরে বলে ওঠেন, ‘বাঃ! স্বামী গুন্ডা আর স্ত্রীর নামে রেশনের ডিলারশিপ! কী কম্বিনেশন!’
বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর নামে একটি গ্রামের এক বাসিন্দার আবেদনের ভিত্তিতে এই মামলার শুনানি চলছিল। মামলায় অভিযোগ করা হয়, মামলাকারীর গ্রাম থেকে সবচেয়ে কাছের রেশন দোকান প্রায় দু’কিলোমিটারের বেশি দূরে। ফলে তাঁদের সরকারি রেশন পেতে সমস্যা হচ্ছে। ওই এলাকায় রেশনের ডিলারশিপ পাওয়ার জন্য ইতিমধ্যে চারজন আবেদন করেছেন বলেও জানান মামলাকারী।
আদালতে এও জানানো হয়, আবেদনকারীদের মধ্যে একজনের স্ত্রীর নামে ডিলারশিপ চাওয়া হয়েছে, তাঁর স্বামী এলাকার পরিচিত সমাজবিরোধী। রাজ্যের কৌঁসুলিও এই বক্তব্যের বিরোধিতা না করে বলেন, ‘এতে আইনে তো কোনও বাধা নেই ডিলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন দুয়ারে রেশন প্রকল্পে বাড়িতে বসেই রেশন পাওয়া যায়। ফলে এখন আর এলাকায় রেশন দোকান থাকতেই হবে, তারও কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।’
সরকারি কৌঁসুলির এই বক্তব্যের সূত্র ধরে বিস্মিত প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘স্বামী গুন্ডা আর স্ত্রী-র রেশন দোকান!’ এরপরেই আদালত তার রায়ে ভিন রাজ্যের একটি উদাহরণ তুলে দেয়। প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের জানান, সে ক্ষেত্রে একটি বেসরকারি স্কুল তৈরি হয়েছিল, যেখানে যিনি স্কুল তৈরি করেছেন, তাঁর স্বামী সমাজবিরোধী বলে পরিচিত।
তেমন একটি স্কুলকে অনুমোদন দেওয়ায় প্রশাসনের সম্পর্কে নাগরিকদের ধারণা কী হয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়! এই উদাহরণ দিয়ে আদালতের সংযোজন, ‘সমাজবিরোধীর আত্মীয় হলেই তিনি রেশনের ডিলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য, আইনে এমন কোনও বাধা নেই। কিন্তু নাগরিকদের মনে প্রশাসনের সম্পর্কে কী ধারণা তৈরি হবে, তা বিবেচনা করা জরুরি।’
এই আবহে ওই চারজনের মধ্যে ডিলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতার মাপকাঠি বিচার করার সময়ে রাজ্য সরকার যেন আদালতের এই রায় মাথায় রাখে, তা স্মরণ করিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি।