‘উনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, আপনারা তাড়াতাড়ি চলে আসতে পারবেন?’ প্রকাশ্যে হাসপাতালের প্রথম ফোন
আনন্দবাজার | ২৯ আগস্ট ২০২৪
বৃহস্পতিবার দুপুরে নতুন মোড় নিল আরজি কর-কাণ্ড। সূত্র: তিনটি ফোন কলের টুকরো।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রথম থেকেই একটি ফোন কলের কথা উঠে আসছিল। ধর্ষিতা এবং নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা দাবি করেছিলেন, গত ৯ অগস্ট সকালে তাঁরা দু’বার ফোন পেয়েছিলেন। সেই ফোনে প্রথমে তাঁদের বলা হয়েছিল, ‘‘আপনাদের মেয়ে অসুস্থ।’’ পরে আবার ফোন করে বলা হয়, ‘‘আপনাদের মেয়ে সুইসাইড করেছে।’’ পরে কলকাতা হাই কোর্টেও নির্যাতিতার পরিবারের তরফে আইনজীবী একই দাবি করেন। এ বার সেই কথোপকথনের অডিয়ো প্রকাশ্যে এল।
ফোন কলে এক মহিলাকণ্ঠের সঙ্গে অন্য এক পুরুষ এবং নারীকণ্ঠের কথোপকথন রয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, আরজি করের ঘটনার দিন নির্যাতিতার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথোপকথনের অডিয়ো এগুলি। আনন্দবাজার অনলাইন যদিও ওই অডিয়োর কোনও ক্লিপেরই সত্যতা যাচাই করেনি।
এই অডিয়োর বিষয়ে নির্যাতিতার বাবা-মাকে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে ওই দম্পতি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, এই অডিয়োর উৎসের বিষয়ে কিছু জানেন না তাঁরা। নির্যাতিতার বাবার কথায়, ‘‘আমরা টিভি দেখছি না। কে কোথা থেকে কী করছে, সে সবের দায় আমরা নেব কেন?’’ নির্যাতিতার মা-ও বলেন, ‘‘কে কোথা থেকে কী জোগাড় করেছেন, কী করে জানব?’’ প্রকাশ্যে আসা অডিয়োতে যে পুরুষকণ্ঠ শোনা গিয়েছে, তা নির্যাতিতার বাবার বলেই বলা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘আমি সংবাদমাধ্যমে এ সব কিছু দেখিনি। আমরা টিভি চালাচ্ছি না।’’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে তিনিও বলেন, ‘‘কয়েকটি অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে কিছু কথোপকথন আছে। প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অডিয়ো ক্লিপে কী আছে আপনারা জানেন। এর আগে লালবাজারে এই মামলা নিয়ে অনেক সাংবাদিক বৈঠক হয়েছে। আমরা আগে যা বলেছি, এই অডিয়ো ক্লিপগুলি কিন্তু সেটাকেই প্রমাণ করে দিচ্ছে।’’
ওই অডিয়োর প্রথম ক্লিপে এক মহিলা কণ্ঠকে বলতে শোনা যাচ্ছে, কারও একটা শরীরখারাপের কথা। মহিলা কণ্ঠ বলছেন, ‘‘ওর একটু শরীরটা খারাপ হয়েছে। আপনারা কি একটু আসতে পারবেন ইমিডিয়েট?’’ এর পর দ্বিতীয় ক্লিপে ‘‘আমি অ্যাসিসট্যান্ট সুপার বলছি, আমি ডাক্তার বলছি না,’’ বলে ওই মহিলা কণ্ঠকে বলতে শোনা যায়। আবার তৃতীয় ক্লিপে সেই কণ্ঠই বলছে, ‘‘উনি সুইসাইড করেছেন হয়তো। বা মারা গেছেন।’’ এই তিনটি অডিয়ো ক্লিপ একটি ফোনেরই অংশবিশেষ, না কি আলাদা আলাদা ফোন কল তা যদিও স্পষ্ট নয়। একই সঙ্গে এই ফোন কল সেই দিনের কি না তা-ও স্পষ্ট নয় এখনও। তবে কথোপকথন একেবারেই তিন জনের। এক পাশে একটি নারী কণ্ঠ। অন্য পাশে দু’জন— একটি পুরুষ এবং অন্যটি মহিলা কণ্ঠ।
প্রথম অডিয়ো:
প্রথম মহিলাকণ্ঠ: ওর একটু শরীরটা খারাপ হয়েছে। আপনারা কি একটু আসতে পারবেন ইমিডিয়েট?
মহিলাকণ্ঠ: আমি অ্যাসিসট্যান্ট সুপার বলছি। আমি ডাক্তার বলছি না।
পুরুষকণ্ঠ: ডাক্তার নেই ওখানে কেউ?
মহিলাকণ্ঠ: আপনার মেয়েকে আমরা ইমার্জেন্সিতে নিয়ে এসেছি। আপনারা আসুন। এসে যোগাযোগ করুন।
দ্বিতীয় মহিলাকণ্ঠ: ওর কী হয়েছিল কী? ও তো ডিউটিতে ছিল!
প্রথম মহিলাকণ্ঠ: আপনারা জলদি চলে আসুন! যতটা তাড়াতাড়ি পারবেন।
তৃতীয় অডিয়ো:
এই ক্লিপটিতে শুধুমাত্র এক মহিলাকণ্ঠই রয়েছে। প্রথম মহিলাকণ্ঠই বলে মনে করা হচ্ছে।
মহিলাকণ্ঠ: উনি সুইসাইড করেছেন হয়তো। বা মারা গেছেন। পুলিশ রয়েছেন। আমরা হাসপাতালে সবার সামনেই রয়েছি। ফোন করছি।
প্রসঙ্গত, আরজি কর-কাণ্ডে নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা ঘটনার পর থেকেই অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের হাসপাতাল থেকে ‘ভুল তথ্য’ দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের প্রশ্ন, কেন প্রথমে বলা হয়েছিল, তাঁদের মেয়ে অসুস্থ এবং পরে বলা হয়েছিল তাঁদের মেয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। আদতে যেখানে তাঁদের মেয়েকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে!
প্রথমে অভিযোগ উঠেছিল, কলকাতা পুলিশ থেকে নির্যাতিতার বাবা-মাকে ফোনে খবর দেওয়া হয়েছিল। কলকাতা পুলিশ জানিয়ে দেয়, তাদের তরফে নির্যাতিতার বাড়িতে কোনও ফোন করা হয়নি। হাসপাতালের তরফে কেউ ফোন করেছিলেন। পরে নিহতের বাবা-মা জানিয়েছিলেন, ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার’ পরিচয় দিয়ে কেউ এক জন ফোন করেছিলেন। তিনি প্রথমে ‘মেয়ে অসুস্থ’ বলেন। পরে বলেন, ‘সুইসাইড’ করেছে বলা হয়। প্রকাশ্যে আসা ফোন কলেও তেমনই শোনা যাচ্ছে।
কলকাতা হাই কোর্টে আরজি কর-কাণ্ডের শুনানিতে নিহতের পরিবারের আইনজীবী তথা সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও জানিয়েছিলেন, প্রথমে পরিবারের কাছে কেউ এক জন ফোন করে বলেন, ‘‘আপনাদের মেয়ে অসুস্থ।’’ পরে আবার ফোন করে বলা হয়, ‘‘আপনাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন।’’ সেই প্রসঙ্গে আদালতে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, পরিবারের দাবি সঠিক। দু’বার ফোন গিয়েছিল মৃতার পরিবারের কাছে। তবে ফোনে কী বলা হয়েছিল, তা নিয়ে আদালতে কিছু বলেনি রাজ্য। কেস ডায়েরিতে সেই বিষয়ে নিয়ে কিছু রয়েছে কি না, তা-ও তখনও স্পষ্ট ছিল না।
এ বার সে দিনের কথোপকথনের অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে এসেছে। যাতে তিনটি অডিয়ো ক্লিপিং আছে। তবে দু’টি ফোন কলই তিনটি ভাগে ভেঙে প্রকাশ্যে এসেছে? না কি তিন বারই ফোন করা হয়েছিল? না কি এক বারের ফোন কলই তিনটি ক্লিপিংয়ে প্রকাশ্যে এসেছে, তা স্পষ্ট নয়। এ-ও স্পষ্ট নয় যে, এর পরে আরজি কর হাসপাতালের তরফে নির্যাতিতার পরিবারকে প্রাথমিক ভাবে ‘ভুল তথ্য’ নিয়ে কী বলা হবে।