• এবার বিশ্বভারতীতেও এক টুকরো দার্জিলিং
    বর্তমান | ৩০ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: বীরভূমের রুক্ষ মাটিতে চায়ের চাষ! শুনতে অবাক লাগলেও এমনই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্বভারতীর পল্লিশিক্ষা ভবনের উদ্ভিদ রোগ-বিজ্ঞান বিভাগ। তেমনটা হলে দার্জিলিংয়ের পাশাপাশি চা বাগানের দেখা মিলবে শ্রীনিকেতনেও। পরীক্ষামূলক পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে চার রকম চা চাষ করার কথা ভাবা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে। এরজন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচার ফার্ম। তবে শুধু চা চাষই নয়, চা নিয়ে করা হবে বিভিন্ন রকম গবেষণা। এমনটাই জানিয়েছেন এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা অধ্যাপক ভোলানাথ মণ্ডল। বিষয়টি জানাজানি হতেই খুশির হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

    জন্মলগ্নের শুরু থেকেই শ্রীনিকেতন পরীক্ষা-নিরীক্ষার আঁতুড়ঘর।‌ কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর যার অন্যতম রূপকার‌। বিদেশ থেকে কৃষি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার পর বীরভূমের রুক্ষ মাটিকে কীভাবে চাষের উপযোগী করা যায়, সেই নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে গবেষণা করেছিলেন। কৃষি বিজ্ঞানে তাঁর সেই ভূমিকা অবিস্মরণীয়। রথীন্দ্রনাথের সেই ভাবনাকে সম্মান জানিয়ে এখনও নিরন্তর বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পল্লি সংগঠন বিভাগ, পল্লিশিক্ষা ভবন, রথীন্দ্র কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র প্রভৃতি জায়গায়। এই পল্লি শিক্ষা ভবনেরই অন্তর্গত উদ্ভিদ রোগ-বিজ্ঞান বিভাগ। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের পঠন-পাঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজে লিপ্ত রয়েছেন ভোলানাথবাবু।‌ সেই ভাবনা থেকেই এবার পরীক্ষামূলকভাবে চা চাষের কাজও শুরু হয়েছে। 

    দার্জিলিং ও বীরভূম আবহাওয়ার আকাশ পাতাল পার্থক্য। সেই বিষয়টিকেই কার্যত চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। কারণ, একদিকে দার্জিলিংয়ে যেমন ঠান্ডা মনোরম আবহাওয়া, ঠিক তার উল্টোদিকে বীরভূমে প্রবল গরম থাকে। তাই আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্যগত কারণে চা পাতার গুণমানের তারতম্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ‌সেটিই চা চাষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ‘ফ্যাক্টর’।‌ যদি তা সফল হয়, তাহলে চা চাষে যুগান্তকারী সাফল্য আসবে বলা বাহুল্য। পূর্ব ভারতে মূলত দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, পার্শ্ববর্তী রাজ্য অসমে চায়ের চাষ হয়ে থাকে। আবহাওয়ার পার্থক্য থাকলেও চা চাষের ক্ষেত্রে বীরভূমের মাটির গুণমান অনেকটা একই রকম অর্থাৎ অম্লযুক্ত। যদিও বীরভূমের থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির মাটিতে জৈব উপাদানের পরিমাণ অনেক বেশি, যা চা চাষের উপযোগী। এখানেই বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন ভোলানাথবাবু। এক্ষেত্রে কৃষিজমির পরিবর্তে রুক্ষ ও অনাবাদী জমিকেই চা চাষের বিকল্প জায়গা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তাই প্রথমবারের চা চাষের সাফল্যের উপর অনেকটা নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ। 

    এবিষয়ে ভোলানাথবাবু বলেন, প্রাথমিকভাবে এই চা চাষকে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে। আপাতত দেড় বিঘা জমিতে টিনালি, টিবি নাইন, ২৩-২৪, ২৫-২৬ এই চার রকম চা চাষ করা হয়েছে। বিষয়টিকে সফল করতে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা। সবকিছু ঠিকঠাক চললে ভবিষ্যতে অ্যাগ্রো ট্যুরিজমের বিকাশে দিগন্ত খুলে যেতে পারে। প্রকল্প সফল হলে চা প্রেমীদের জন্য সুখবর হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
  • Link to this news (বর্তমান)