সকাল ৬টায় রোগীকে ভর্তি, বেলা ১২টাতেও দেখা নেই চিকিত্সকের
বর্তমান | ৩০ আগস্ট ২০২৪
সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: সকাল ৬টায় ভর্তি করে বেলা ১২টা পর্যন্ত ডাক্তার দেখেননি। স্যালাইন, ইঞ্জেকশন, ওষুধ কিছুই দেওয়া হয়নি। ক্রমশ রোগিণীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। নিরুপায় হয়ে বাড়ির লোকেরা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে নার্সিংহোমে নিয়ে যান। বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনে ক্ষোভ উগরে দেন ফুলবাড়ির বাসিন্দা দীনেশ সিংহ।
দীনেশ বলেন, আমার পুত্রবধূ স্ত্রীরোগে আক্রান্ত। এদিন সকাল ৬টায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসি। সেখান থেকে ওয়ার্ডে ভর্তি করতে লিখে দেওয়া হয়। ভর্তিও করা হয়। কিন্তু, বেলা ১২টা পর্যন্ত ডাক্তার আসেননি। কোনও ওষুধ দেওয়া হয়নি। ডাক্তরদের আন্দোলনের নামে বিনা চিকিৎসায় মানুষকে দুর্ভোগে ফেলার খেলা চলছে। তাই পুত্রবধূকে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছি।
আর জি কর কাণ্ডে ন্যায় বিচারের দাবিতে পিজিটি,জুনিয়র ডাক্তাররা মেডিক্যালে টানা ২০ দিন ধরে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন। এর জেরে মেডিক্যালের চিকিৎসা পরিষেবা বেহাল হয়ে পড়েছে। জরুরি বিভাগেও চিকিৎসায় অবহেলা, রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ বেড়েই চলেছে।
এদিনই উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর মহকুমার সোনাপুরের বাসিন্দা রামকৃষ্ণ মাহাত দু’দিন ধরে তাঁর বৃদ্ধ বাবাকে এনে চিকিৎসা না পেয়ে ঘুরে যাচ্ছেন। এদিন রামকৃষ্ণ বলেন, বাবার পা ভেঙেছে। শনিবার এনেছিলাম। জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখে ওষুধ দিয়ে দু’দিন পরে আসতে বলেন। সেই মতো এদিন বাবাকে এনেছিলাম। অর্থোপেডিক বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয় প্লাস্টার করা হবে বলে। অর্থোপেডিক বিভাগ থেকে বলা হয়, ডাক্তারদের আন্দোলন চলছে। এখন কিছু হবে না। বাড়ি নিয়ে যান। যে ওষুধ দেওয়া হয়েছে সেসব খাওয়ান। বেডরেস্টে রাখুন, ঠিক হয়ে যাবে।
একথা শুনে ক্ষোভে পেটে পড়েন তিনি। বৃদ্ধ বাবাকে কোলে করে এনে গাড়িতে বসান। তখনও তাঁর বাবা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। রামকৃষ্ণ মাহাত বলেন, আমরা গরিব মানুষ। নার্সিংহোমে চিকিৎসা করার ক্ষমতা নেই। এতবড় মেডিক্যাল কলেজের এই হাল হলে আমাদের মতো অসহায় মানুষ কোথায় চিকিৎসা করাবে? বাবার বাঁ পায়ের হাড় ভেঙে গিয়েছে। বলা হচ্ছে বেডরেস্টে থাকলে ঠিক হয়ে যাবে! এখানে চিকিৎসার নামে প্রহসন চলছে।
এদিন সকালেই উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা থেকে আসা ডেঙ্গু আক্রান্ত এক ব্যক্তিকেও জরুরি বিভাগ থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। হাসপাতাল সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক বলেন, এমনটা হওয়ার কথা নয়। অর্থোপেডিক বিভাগ কেন প্লাস্টার না করে বৃদ্ধকে ফিরিয়ে দিল খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। ফুলবাড়ির মহিলা যে সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন তাতে তাঁকে সরাসরি লেবার ওয়ার্ডে ভর্তি করার কথা। সেখানে সারাক্ষণ ডাক্তার থাকেন। তবু কেন এমন অভিযোগ উঠল তা খতিয়ে দেখব। চিকিত্সা মেলেনি। ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফুলবাড়ির এক মহিলাকে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে।