• সেমিনার রুমে ধর্ষণ-খুন নয়? আর জি কর কাণ্ডে মরিয়া সিবিআইয়ের নয়া তত্ত্ব
    বর্তমান | ৩০ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর জি করের ভয়াবহ ধর্ষণ-খুনের ঘটনা কি সেমিনার রুমে হয়নি? সিবিআইয়ের অন্দর থেকে এই প্রশ্নই এখন তুলে দেওয়া হয়েছে। মৃতার শরীর ঢাকা দেওয়া চাদর নিয়ে একপ্রস্থ বিতর্ক উস্কে ওঠার পর এবার কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকরা এই তত্ত্ব খাড়া করছেন। সিবিআই তদন্তভার কাঁধে নেওয়ার পর পেরিয়ে গিয়েছে ১৫ দিন। আর ক্যালেন্ডারের তারিখের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্ষোভ। মর্মান্তিক এই ধর্ষণ-খুন জাতীয় ইস্যু হয়ে যাওয়ায় নিত্যদিন দিল্লি থেকে চাপ আসছে। সিবিআইয়ের দিল্লির কর্তারাও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন। ততই ফাঁস শক্ত হচ্ছে রাজ্যে আসা তদন্তকারী অফিসারদের। ইতিমধ্যেই মূল অভিযুক্ত সঞ্জয়, সন্দীপ ঘোষ সহ বাকিদের দফায় দফায় পলিগ্রাফ পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার হাসপাতালের দুই নিরাপত্তা রক্ষীরও লাই ডিটেক্টর টেস্ট হয়েছে। এদিন আরও এক দফা জেরা হয়েছে সন্দীপবাবুর। তারপরও সুনিশ্চিত উপসংহারে পৌঁছতে পারছেন না তদন্তকারী অফিসাররা। এবার তাই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তরুণীর দেহ সেমিনার রুমে কীভাবে এমন পরিপাটি করে রাখা হল? তাহলে কি ঘটনাস্থল সেমিনার রুম নয়?

    এই তত্ত্ব যদি সঠিক হয়, তাহলে রাজ্যজুড়ে যে তোলপাড় পড়বে, সে ব্যাপারে সংশয় নেই। কিন্তু হঠাৎ এই চাঞ্চল্যকর ইঙ্গিত কেন? সিবিআই সূত্রে খবর, বারবার জেরাতেও অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার দোষ স্বীকার করেনি। এমনকী তার দাবি, এই বিষয়ে সে কিছুই জানত না। ঘটনার দিন সকাল ছ’টা নাগাদ হাসপাতালে ভর্তি এক পরিচিতকে দেখে করিডর দিয়ে ফেরার সময় সঞ্জয় খেয়াল করে, সেমিনার রুম খোলা। সেই দেখে সে ভিতরে ঢোকে। তখন সেটি নাকি ফাঁকাই ছিল। তার এই জবাব সিবিআইকে নতুন করে ভাবাচ্ছে। তদন্তকারীরা হাসপাতালের ওই ফ্লোরে গিয়ে দেখেন, করিডোর থেকে বেরিয়েই রয়েছে সিসি ক্যামেরা। একটু এগিয়ে বাঁক ঘোরার পর সেমিনার রুমের দরজা। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই বাঁক করিডরের সিসি ক্যামেরার নজরে আসে না। তাই ‘ঘটনাস্থলে’ তরুণী কখন এসেছিলেন, তার উত্তর এখনও পায়নি সিবিআই। এ বিষয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মী ও ডাক্তারদের নানারকম বয়ান ধন্দ বাড়িয়েছে। তদন্তকারীদের হাতে আসা ভিডিও অনুযায়ী, তরুণীর গায়ের চাদর দেখে মনে হচ্ছে, যেন কেউ তা গায়ে দিয়ে রেখেছে। ধর্ষণের মুহূর্তে তরুণী বাধা দেবেন ও ধস্তাধস্তি হবেই। স্বাভাবিক নিয়মে বাঁচার জন্য তিনি পালানোর চেষ্টা করবেন। সেক্ষেত্রে সেমিনার হলে থাকা জিনিসপত্র অগোছালো থাকবে। অথচ, সবকিছুই ছিল সাজানো গোছানো। এমনকী তরুণীর জুতোজোড়া এমনভাবে রাখা ছিল, যেন দেখে মনে হবে এইমাত্র ঘরে ঢুকেছেন। সিবিআইয়ের আরও দাবি, সেমিনার রুম ঘটনাস্থল হলে অভিযুক্ত সব নষ্ট করে দিল না কেন? এতবড় অপরাধ করার পর ভয়ে দ্রুত এলাকা ছাড়বে সে। সবকিছু পরিপাটি করে রাখার মানসিকতা তার থাকবে না। লালবাজারের ভিডিওতে সিবিআই দেখেছে, চাদরের রং রয়েছে নীল। আবার তরুণীর পরিবার দাবি করেছে, চাদর ছিল সবুজ। প্রথমে নাকি লালরঙের চাদরও দেখা গিয়েছিল। যদিও ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নীল রঙের চাদরই ঘটনাস্থলে বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, তরুণীর নিম্নাঙ্গের পোশাক সাজিয়ে রাখবে অভিযুক্ত? ফলে নতুন ধন্দ এবং নয়া তত্ত্বেও এখন মরিয়া সিবিআই।
  • Link to this news (বর্তমান)