• ট্রেন দুর্ঘটনায় দ্রুত উদ্ধারে রেলের মহড়া
    বর্তমান | ৩০ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: লাইনচ্যুত হয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা—কামরাগুলো লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে রয়েছে লাইনের ওপর। একটা কামরার উপর উঠে গিয়েছে আরেকটা। অভিশপ্ত সেই কামরা থেকে কোনওক্রমে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসছেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত যাত্রীরা। হুড়োহুড়ি লেগে গিয়েছে ঘটনাস্থলে।‌ বিভিন্ন দিক থেকে ছুটে আসছে উদ্ধারকারীর দল। স্থানীয় মানুষরা ভিড় করেছেন। অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন নাগাড়ে বেজে চলেছে। সাম্প্রতিককালে দেশের মানুষের কাছে এই দৃশ্য একেবারেই নতুন নয়। কখনও ট্রেনের কামরা লাইনচ্যুত হয়ে পড়েছে, কখনও আবার দুটি ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ। করমণ্ডল এক্সপ্রেস, ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, পণ্যবাহী মালগাড়ি একাধিক দুর্ঘটনার উদাহরণ সামনে এসেছে। ভয়াবহ সেসব অভিজ্ঞতা থেকেই ট্রেনের দুর্ঘটনার মক ড্রিলের (মহড়া) আয়োজন করা হল নদীয়া জেলার ধুবুলিয়া স্টেশনে। উদ্দেশ্যে, দুর্ঘটনাপতিত ট্রেনের কামরা থেকে কীভাবে দ্রুত উদ্ধার করে আনা যায় যাত্রীদের। যদিও রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, মক ড্রিলের আয়োজন বিভিন্ন জায়গায় চলছে। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে আশু কর্তব্যটা কী, তা ঠিক করে যাতে লড়াই চালাতে পারেন আধিকারিকরা।  

    কৃষ্ণনগর রেলের এক আধিকারিক বলেন, কল্যাণী সীমান্ত স্টেশনে এর আগে এরকম মক ড্রিল হয়েছে। এবার ধুবুলিয়াতে হল। আগে থেকে একটি ট্রেনের ফাঁকা কামরা নিয়ে আসা হয়। তারপর সেটিকে এমনভাবে রাখা হয় যাতে মনে হয় ট্রেনটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত। দুর্ঘটনা পর্বে কীভাবে চালাতে হবে উদ্ধারকাজ, কীভাবে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে হবে আহতদের, সেটাই হাতেকলমে করে দেখানো হয়েছে। রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মীরা করণীয় বিষয়গুলি আগে থেকেই জানতে পারেন। ভবিষ্যতে কখনও এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে, কীভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে, তা দেখানো হয় মক ড্রিলের মাধ্যমে। বিগত কয়েকদিন ধরেই ধুবুলিয়াতে মক ড্রিলের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল।  

    বৃহস্পতিবার মক ড্রিলের জন্য ধুবুলিয়া স্টেশনকে দুর্ঘটনাস্থলে রূপান্তরিত করা হয়। সেখানে দেখা যায়, স্টেশনের পাশে ফাঁকা জায়গায় লালগোলা প্যাসেঞ্জারের একটি ফাঁকা কামরা। রেলের উদ্ধার কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা ছুটোছুটি করছেন চত্বরে। শুধু তাই নয়, সেখানে রয়েছেন ডাক্তার, উদ্ধার ও পুলিস কর্মী সহ অন্যান্য রেলের আধিকারিকরা। জানা যায়, নদীয়া জেলা এবং তার আশপাশ থেকে উদ্ধারকারী দল মক ড্রিল হওয়ার মাত্র দু’ঘন্টা আগে খবর পেয়েছিলেন। সকালে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কাছে পাঠানো হয় একটি মেসেজ—‘ধুবুলিয়ায় রেল দুর্ঘটনা, দ্রুত উপস্থিত হওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।’ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কে কত দ্রুত অকুস্থলে পৌঁছলেন, মেসেজ পাঠিয়ে তা ঝালিয়ে নেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত,  দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেন থেকে যাত্রীদের কত দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব। উদ্ধারকারীদের পারদর্শিতা প্রদর্শিত হয় এই মক ড্রিলের মাধ্যমে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে কীভাবে উদ্ধারকাজে যুক্ত করা যেতে পারে, তাও দেখানো হয়। রেলের এই উদ্যোগের ফলে ভবিষ্যতে যে কোনোও অপ্রীতিকর ঘটনার দ্রুত মোকাবিলা করা যাবে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
  • Link to this news (বর্তমান)