• আর জি কর: বেওয়ারিশ লাশে গরমিল, বিক্রি করা হয়েছে অঙ্গ, এবার মর্গ অভিযান সিবিআইয়ের
    বর্তমান | ৩০ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর জি করে আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে হাসপাতালের মর্গ এবার সিবিআইয়ের নজরে। প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের আমলে বিগত চার বছরে লাশকাটা ঘরে কত বেওয়ারিশ লাশ এসেছে এবং সেগুলি কোথায় পোড়ানো হয়েছে, সেই সংক্রান্ত নথি খুঁজতেই বৃহস্পতিবার আর জি করে যায় সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার টিম। দীর্ঘক্ষণ মর্গ ও স্টোর রুমে তল্লাশি চালায় তারা। এই মামলায়  জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় অভিযোগকারী হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার আখতার আলিকেও। 


    আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে সিবিআই জেনেছে, আর জি করে আসা বেওয়রিশ লাশের হিসাবে গরমিল রয়েছে। দেহ পাচার করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। অনেক লাশ থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে চোখ, কিডনি। সেগুলি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। কোভিডের সময় ব্যাপক হারে দেহ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মৃতদেহের বিভিন্ন অঙ্গ বিক্রি হয়েছে খোলা বাজারে। এই নিয়ে টালা থানায় লিখিত অভিযোগ হলেও কোনও তদন্তই হয়নি। বেওয়ারিশ লাশ নিয়ে হিসেবে গরমিল ধরা পড়েছে ২০২১-২৪-র মধ্যে। এই সময় এখানে প্রিন্সিপাল ছিলেন সন্দীপ ঘোষ। চক্র গড়ে হাসপাতালে এই কারবার চলেছে দীর্ঘদিন। আট-দশ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে জেনেছে সিবিআই। আখতার আলির করা অভিযোগেও এই বিষয়টি উল্লেখ ছিল। সেই কারণে একটি টিম আখতারকে ডেকে পাঠায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। কীভাবে, কারা এই চক্র চালাতেন, এই নিয়ে তাঁকে একাধিক প্রশ্ন করা হয় বলে এজেন্সি সূত্রে খবর। 


    অন্যদিকে আরও একটি টিম পৌঁছে যায় হাসপাতালের মর্গে। মর্গে একসঙ্গে কতগুলি দেহ থাকে, কুলিং সিস্টেম কী রয়েছে, ডেড বডির ট্যাগ কীভাবে মেনটেন করা হয়, এই সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে খোঁজ নেন অফিসাররা। আর জি করে দৈনিক কত বেওয়ারিশ লাশ আসে ও কোভিডের সময় এখানে হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা কত ছিল, তার তথ্য সংগ্রহ করেন। স্টোর রুমে এই সংক্রান্ত রেজিস্টার বুক নিয়ে পরীক্ষা করা হয়।


    সিবিআই সূত্রে খবর, এখান থেকেই গরমিল ধরা পড়ছে। জানা যাচ্ছে, বিগত চারবছর ধরে বেওয়ারিশ লাশের নথি রাখা হতো নাম কা ওয়াস্তে। এই ধরনের দেহ মর্গে আসার পর তাতে কোনও ট্যাগ লাগাতেন না সেখানকার কর্মীরা। খাতায় কলমে নথিভুক্ত না থাকায় সহজেই সেই দেহ বাইরে বের করে দেওয়া হতো বলে জেনেছে সিবিআই। নিয়মানুযায়ী বেওয়ারিশ লাশ এলে স্থানীয় থানাকে জানাতে হয়। এক্ষেত্রে তা করাই হতো না।  পুলিসের কাছে খবর গেলে বিভিন্ন জায়গায় মিসিং ডায়েরি হওয়া পরিবার এসে দেখে শনাক্ত করতে পারত। কিন্তু কার নির্দেশে নিয়ম ভাঙা হল, সেটাই খুঁজছেন তদন্তকারীরা। এছাড়া এই ক’বছরে কত লাশ পাচার হয়েছে, তার হিসেবও করছেন তদন্তকারীরা। 


    এদিকে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের চেম্বারে জন্মদিনের কেট কাটছেন অভিযুক্ত সিভিক সঞ্জয়— এই ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর তার সত্যাসত্য জানতে ওই ফুটেজ সংগ্রহ করেছে এজেন্সি। ছবিটি জাল না আসল, জানতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)