• ‘মৌমাছি কলোনি’ হাল ফেরাচ্ছে কুলতলির মৎসজীবীদের
    বর্তমান | ৩০ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: চারপাশে ফুলের বাগান। লাল-হলুদ-সবুজ-গোলাপি ফুল হাওয়ায় দোল খায়। খেলে বেড়ায় অসংখ্য পাখি-ভ্রমরা-মৌমাছি। সেই বাগানে মৌমাছিদের জন্য কলোনি তৈরি করেছে মানুষ। মধু খেয়ে পেট ভরিয়ে সেই কলোনিতে মৌমাছি আসে। মৌ বনে মৌ জমে।  তৈরি হয় মধুর ভারে নুইয়ে পড়া বড় বড় মৌচাক। তারপর অনায়াসে তা থেকে মধু সংগ্রহ করেন কয়েকজন সংগ্রহকারী। এই করতে করতে তাঁরা দু’পয়সার মুখ দেখে ফেলেছেন। এখন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আর গভীর জঙ্গলে মাছ-কাঁকড়া ধরতে যেতে হচ্ছে না তাঁদের। বাঘের ভয় সত্ত্বেও আরও গভীর বনে গিয়ে মধুও সংগ্রহ করতেও হচ্ছে না। ঘরের কাছে ফুলের বনে পেয়ে যাচ্ছেন পাত্র ভর্তি মধু। তা বেচে দিব্যি রোজগার হচ্ছে। মৌমাছিদের কলোনির দৌলতে সংসারের হাল ফিরছে কুলতলির মধু সংগ্রহকারীদের। তাঁদের কয়েকজন তো লাখপতিও হয়ে উঠেছেন বলে জানালেন।


    বন সেখানে ঘন নয়। ছায়া ছায়া পরিবেশ। ফুলের মেলা। সেখানে সার বেধে রাখা সাদা-নীল-খয়েরি কাগজে মোড়া বাক্স। সেগুলি অনেকটা চিঠি ফেলার বাক্সের মতো দেখতে। তাতে রাখা জাল। সে জালে পা রেখে বসে মৌমাছি। চাক বানায় বাক্সের ভিতর। মধু উগড়ে দেয়। একসময় মধু যখন পরিপূর্ণ হয়ে যায় তখন সংগ্রহকারীরা টুপি-দস্তানা-মুখোশ পরে যান। নিয়ে আসেন বনফুলের টাটকা পুষ্টিকর মধু। মধুটির নামও দিয়েছেন জুৎসই-‘বনফুল’।


    করোনার পর কুলতলির মৎস্যজীবীদের বিকল্প রোজগারের ব্যবস্থা করতে প্রচার শুরু হয়েছিল। জলে কুমির ডাঙায় বাঘের সঙ্গে লড়াই করে মাছ ও কাঁকড়া ধরার ঝুঁকি ছেড়ে দিয়ে তাঁরা বিকল্প কাজ করতে পারবেন এমন পরিকল্পনা থেকে মৌমাছির কলোনি বানানোর কাজ শুরু হয়। তা জোরকদমে চলেছে। এখন বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী কলোনি। সেখানে নির্বিঘ্নে গিয়ে সংগ্রহকারীরা মধু পাড়েন। প্রথমে অল্প তারপর অনেক মৎসজীবী এই কাজে আগ্রহ দেখান। এখন শতাধিক এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। শুভঙ্কর জানা, কৌশিক মাঝি, হরিপদ কয়াল নামে কয়েকজন সংগ্রহকারী বললেন, ‘ঝুঁকির কাজ ছাড়ার জন্য বাড়িতেও বলত। এখন আমরা অনেক শান্তিতে আছি।’ এঁদের কেউ মধু কেমন হচ্ছে তা দেখাশোনা করেন। কেউ সংগ্রহ করার পর প্যাকেজিংয়ের দায়িত্বে। কেউ নিয়ে যাওয়ার কাজ করেন। এই কাজে যুক্ত এক ব্যক্তি বলেন, ‘আগে মাছ ও কাঁকড়া ধরে বছরে মেরেকেটে ৫০ হাজার টাকা আয় হতো। এখন বেড়েছে অনেক। সুন্দরবনের অন্যান্য প্রান্তের মৎস্যজীবীদেরও এই কাজে যুক্ত করার আহ্বান জানানো হবে।’
  • Link to this news (বর্তমান)