দৃষ্টির উন্নতি আহত সার্জেন্ট দেবাশিসের, হামলায় গ্রেপ্তার ৩
এই সময় | ৩০ আগস্ট ২০২৪
এই সময়: মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের দিন ডিউটি করতে গিয়ে আন্দোলনকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে জখম কলকাতা পুলিশের সার্জেন্ট দেবাশিস চক্রবর্তীর বাঁ চোখের অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে বৃহস্পতিবার এমনই জানানো হয়েছে। যে ভাবে তাঁর চোখে ইটের আঘাত লাগে, তাতে তিনি ওই চোখে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন কি না, তা নিয়ে বুধবার পর্যন্ত সন্দিহান ছিলেন চিকিৎসক ও কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা।তবে বুধবারই তাঁর বাঁ চোখে অপারেশন হয়। তাঁর চোখের আংশিক উন্নতি হয়েছে বলেই হাসপাতাল সূত্রের খবর। তিনি ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন বলে আশাবাদী চিকিৎসকরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এ দিন হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে দেখে আসেন রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকা। রাজ্য সরকার সবরকম ভাবে তাঁর পাশে আছে বলেও দেবাশিস ও তাঁর পরিবারকে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যসচিব।
দেবাশিস বর্তমানে কলকাতা পুলিশের ইস্ট ডিভিশনের সাইবার সেলে কর্মরত। তাঁর উপর হামলার ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে ময়দান থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম রিঙ্কু সিংহ, জিতেন এবং সুব্রত দাস। তিনজনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে। সূত্রের খবর, দক্ষিণ শহরতলির মহেশতলার বাসিন্দা রিঙ্কু বিজেপির কর্মী বলেই পরিচিত।
সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরেই এই গ্রেপ্তারি। সেই সঙ্গে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযান ঘিরে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টার অভিযোগে বেহালার একটি গেস্ট হাউস থেকে প্রবীর দাস নামে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের’ এক নেতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরজি করের ঘটনার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় কলকাতা ও রাজ্য পুলিশকে নিশানা করেও বিভিন্ন ধরনের প্রচার চলছে।
এমনকী পুলিশকর্মী ও আধিকারিকদের পরিবারকে কটাক্ষ করে এমনও লেখা হয়েছে— ‘পুলিশ তুমি যতই মারো, তোমার মেয়েও হচ্ছে বড়...’। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে এমন ভাষা নিয়েও নাগরিক সমাজের একাংশের মধ্যে মতভেদ আছে। এই প্রেক্ষিতে নবান্ন অভিযানের আইন-শৃঙ্খলা সামলাতে গিয়ে যে ভাবে দেবাশিস রক্তাক্ত হয়েছেন, সেই ছবি কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন অংশের কর্মী-আধিকারিকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন।
কেউ এই ছবি নিজেদের হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকের ডিসপ্লে পিকচার বা কেউ স্টেটাস হিসেবে তুলে ধরেছেন। অনেক পুলিশ অফিসার আবার সামাজিক মাধ্যমে বাকি সহকর্মীদের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ...! দেবাশিসের ছবিটা সকলে প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার করো।’ এ দিন পুলিশের অনেক কর্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন— ‘পুলিশের মেয়ের চিন্তা ছাড়ো, সে লড়াই করেই হচ্ছে বড়।’
এই তালিকায় কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের বেশ কয়েকজন আধিকারিক ও অফিসার রয়েছে। আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনাকে ঘিরে ওঠা বিভিন্ন প্রশ্ন এবং ১৪ অগস্ট রাতে আরজি কর হাসপাতালে বহিরাগতদের হামলার প্রেক্ষিতে সার্বিক ভাবেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করছেন। তবে পুলিশের তরফ থেকেও তাদের ভাবমূর্তি ফেরানোর প্রয়াস চলছে। এই সব পোস্ট ও শেয়ারও সেই লক্ষ্যে কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছে।
কলকাতা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, ‘গত কয়েক সপ্তাহে অজস্র শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও জমায়েত হয়েছে শহরে। আমরাও আন্দোলনকারীদের যাতে কোনও অসুবিধা না-হয়, সেই চেষ্টা করছি। তারপরেও পুলিশকর্মী বা অফিসারদের পরিবারকেও যে ভাবে কোথাও কোথাও নিশানা করা হচ্ছে, সেটা দুর্ভাগ্যজনক।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক পুলিশকর্মী এরকমও পোস্ট করছেন, যেখানে বলা হচ্ছে, ‘বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের পেশাটাকে সম্মান করেন। এই চাকরি আমার বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তানকে বাঁচিয়ে রেখেছে। কোনও এক-দু’জন লোকের জন্য সমগ্র পুলিশ ফোর্সকে দোষারোপ আমরা মানব না। এটাই আমাদের প্রতিবাদ।’