• লাঙল হাতে পুরুষালি দুর্গে আঘাত ভূগোল অনার্স পাশ করা সমাপ্তির
    এই সময় | ৩০ আগস্ট ২০২৪
  • আশিস নন্দী, হাবরা

    একহাঁটু কাদাজলে দাঁড়িয়ে ধানের বীজতলা রোপণ করছেন ঝকঝকে, উচ্চশিক্ষিত তরুণী। সালোয়ার কামিজ পরে গোরু নিয়ে ভিজে মাঠে লাঙল চালানো, ট্রাক্টর চালিয়ে জমির মাটি সমান করা বা ধান ঝাড়ার কাজ— হাবরার সমাপ্তি মণ্ডল কৃষিকাজের পুরুষালি দুর্গে আঘাত হানছেন প্রতিদিন। যে হাতে পার্টটাইম কাজ করতে গিয়ে পেন ধরেন, কম্পিউটারের মাউস ধরেন অনায়াসে, সেই হাতেই সমাপ্তি তুলে নিয়েছেন লাঙল-কাস্তে।ভূগোলে অনার্স নিয়ে হাবরা শ্রীচৈতন্য কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করেছেন পাঁচ বছর আগে। স্বপ্ন ছিল একটা সরকারি চাকরির। পরীক্ষাও দিয়েছেন অনেক। কিন্তু সেই চাকরি কবে হবে, তার আশায় বসে না থেকে পড়তে পড়তেই বাবার জমিতে শুরু করেছিলেন চাষবাস। ছয় বোনের মধ্যে সমাপ্তিই ছোট। বাকি দিদিদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় কৃষিজীবী বাবাকে সাহায্য করার কেউ না থাকায় এগিয়ে আসেন ছোটমেয়ে। পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাবার কাছ থেকে শিখে ফেলেন চাষবাসের খুঁটিনাটি।

    হাবরা ব্লকের কুমড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আনখোলা গ্রামে বাড়ি সমাপ্তির। শহর থেকে খুব দূরে নয়। প্রায় নয় বছর হলো বাবা ভোলানাথ মণ্ডল মারা গিয়েছেন। বাবার মৃত্যুর পর সংসার চালাতে নিজেদের সাড়ে তিন বিঘা জমিই ছিল সম্বল। মা এবং বড়দি পুষ্প মণ্ডলকে নিয়ে সমাপ্তির সংসার। ভরা বর্ষায় সেই জমিতে এখন আমন ধান ফলেছে। ধান উঠে গেলেই শীতের সব্জি চাষ করবেন দুই বোন। চাষের জন্য রাজ্য সরকারের কৃষকবন্ধু ভাতাও পান তিনি।

    আগে চাকরি না পাওয়ার আক্ষেপ থাকলেও এখন ‘ফুলটাইম’ চাষবাসেই মন তরুণীর। তাঁকে চাষের সাহায্য করেন তাঁর মা এবং বড়দি পুষ্প। কিছুদিন আগে হাবরা হাসপাতালে অস্থায়ী পদে একটা চাকরি পেয়েছেন সমাপ্তি। সে কারণে ইদানীং মাঝে মাঝে চাষের কাজে দিনমজুরদেরও ডাকতে হয়। তবে এখনও নিয়মিত চাষের জমিতে লাঙল ও ট্রাক্টর চালান। দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, লোকে কী বলবে তা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে ‘চাষার মেয়ে’ সমাপ্তির মূল ফোকাস চাষবাসই।

    সমাপ্তির কথায়, ‘পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে বাবা যখন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তখন থেকেই জমি-লাঙলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। আমি জমিতে জৈব সার ব্যবহার করি। খুব কম রাসায়নিক সার দিই। আমাকে দেখে কোনও মেয়ে যদি চাষের উপর ভিত্তি করে জীবিকা বেছে নেন, তা হলেই মনে করব আমার চেষ্টা সার্থক হয়েছে।’

    এই প্রসঙ্গে অশোকনগর কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের কৃষিবিজ্ঞানী বাবুলাল টুডু বলেন, ‘এটা খুব ভালো দৃষ্টান্ত। কৃষি আমাদের ভিত্তি। সেই ভিত্তির উপর আস্থা রেখে সমাপ্তি মণ্ডলের মতো নতুন প্রজন্মের সদস্যরা এগিয়ে আসছেন দেখে ভালো লাগছে। সমাপ্তি আরও এগিয়ে যান, এটাই চাই।’
  • Link to this news (এই সময়)