আরজি কর-কাণ্ডে সকলের ব্যথা প্রকাশ্যে, এ বার তার সংহত প্রতিবাদী রূপ দরকার: অরিজিৎ
আনন্দবাজার | ৩০ আগস্ট ২০২৪
বাংলার মানুষের প্রতি, বাংলার প্রতিবাদ-আন্দোলনের প্রতি এখনও আস্থা রাখছেন অরিজিৎ সিংহ। কেবল, তার সুসংহত প্রকাশ দেখতে চাইছেন গায়ক। ফের সমাজমাধ্যমে সে কথা জানিয়ে নিজের অনুভূতি ছড়িয়ে দিলেন তিনি। নিজের কণ্ঠ রেকর্ড করে ভাগ করে নিলেন নিজের ভাবনা। সেখানেই প্রকাশ পেল তাঁর একাধিক বক্তব্য এবং যুক্তি। গায়ক বারেবারে একটাই কথা বলেছেন, “অন্যায়, অপরাধ প্রত্যেক স্তরে। সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানানোর মুখ হয়ে উঠেছেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নির্যাতনে মৃতা তরুণী চিকিৎসক। এটাই উপযুক্ত সময় বৃহত্তর আন্দোলনের পথে এগিয়ে যাওয়ার। প্রত্যেকের প্রতিবাদ একত্রিত হয়ে যদি সুসংহত রূপ নেয় তা হলে সব অসম্ভব সম্ভব হবে।”
গায়ক কিন্তু এ টুকু বলেই থামেননি। তাঁর আরও বক্তব্য, “প্রত্যেকের প্রচুর দাবি। প্রত্যেকের অনেক যন্ত্রণা। একটি অঘটনকে কেন্দ্র করে সে সব আজ প্রকাশ্যে। সেটাই খুব স্বাভাবিক। কিন্তু তাকে হাতিয়ার বানিয়ে সহিংস আন্দোলন জায়গা করে নিক— এই ভাবনার আমি ঘোর বিরোধী। বরং, যাঁরা অহিংস ভাবে আন্দোলন করছেন, মিছিলে হাঁটছেন আমি তাঁদের পক্ষে।” তাঁর যুক্তি, তাঁর এই প্রতিবাদী বাংলাকে দেখে মনে হয়েছে, পারলে এক মাত্র পশ্চিমবঙ্গই কিছু করে দেখাতে পারবে। সেখানকার মানুষদের উপরে তাঁর পূর্ণ আস্থা রয়েছে গায়কের। তিনি উপলব্ধি করতে পারছেন, বাংলাই পথ দেখাবে। তিনি এও জানাতে ভোলেননি, তাঁর শরীরে পঞ্জাবি রক্তের পাশাপাশি বাঙালি রক্তও বইছে। তাঁর মা বাঙালি। তাই তিনি নিজেকে গর্ব করে ‘বাঙালি’ বলতে ভালবাসেন।
এক জন মেয়েকে বাঁচাতে গোটা বাংলা এগিয়ে এসেছে। প্রত্যেক দিন মিছিলে পা মেলানোর জন্য তিনি তাই সাধুবাদ জানিয়েছেন কলকাতাবাসীদের, রাজ্যবাসীদের। একই সঙ্গে এও মনে করিয়ে দিলেন, “দিনে মিছিলে হেঁটে রাতে নিশ্চিন্তে বাড়িতে বসে গেলে কিন্তু চলবে না। প্রত্যেক দিন এই আন্দোলনকে নিজের মধ্যে ধরে রাখতে হবে।” প্রশ্ন তুলেছেন, আবার মিছিলে হাঁটার জন্য আর একটা কারণের অপেক্ষা কেন করবেন রাজ্যবাসী? কেনই বা তার জন্য দলনেতার প্রয়োজন হবে? কেনই বা তাতে রাজনীতির রং লাগবে? যেখানে রাজ্য প্রমাণ করে দিয়েছে, সাধারণ মানুষ দলবদ্ধ ভাবে অহিংস আন্দোলনে নামতে পারে। এই জায়গা থেকে তাঁর ভয়, মিছিলের পর মিছিল করে আসল সমস্যার মুখ যেন ঘুরিয়ে দেওয়া না হয়। অরিজিতের আবেদন, প্রত্যেকের একটাই লক্ষ্য হোক, নির্যাতিতার বিচার। সেই লক্ষ্য থেকে শেষ দিন পর্যন্ত কেউ যেন সরে না আসেন। আর এই নারকীয় অপরাধ বিশ্বের কোথাও যেন না ঘটে। সে রকম দৃষ্টান্ত তৈরি করুক তাঁর প্রিয় শহর।