একদা মাওবাদী কার্যকলাপের সময় খবরের শিরোনামে ছিল ঝাড়গ্রাম। পরিস্থিতিটা এখনও বদলায়নি। ফের খবরের শিরোনামে সেই ঝাড়গ্রাম। তবে মাওবাদী কার্যকলাপের জন্য নয়, ঝাড়গ্রামে দাঁতাল হাতির অবাধ বিচরণের কারণে। ঝাড়গ্রামের জ্বলন্ত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে দলমার হাতির দল।জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, হাতির হানায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে বিগত এই কয়েক বছরের মধ্যে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম জেলায় হাতির হানায় মৃত্যু হয় ৩২ জনের। চলতি মাসের ১৫ তারিখ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত মাত্র দশ দিনে হাতির হানায় মৃত্যু হয় ৪ জনের। অপরদিকে, ঝাড়গ্রাম জেলার তিনটি বন বিভাগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট সহ একাধিক কারণে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকটি হাতির। বর্তমানে ঝাড়গ্রামে মাওবাদী সমস্যা না থাকলেও হাতির সমস্যায় জেরবার এলাকাবাসী।
জাম্বনি ব্লকের বাসিন্দা ৫৫ বছর বয়সী পুলিন পাল বলেন, ‘আমরা ছোট থেকে কখনও এতো হাতি দেখিনি। শুধু হাতির গল্প শুনেছিলাম। এখন তো প্রতিদিনেই হাতি দেখতে পাচ্ছি।’ এত হাতি কোথা থেকে এল জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে? সময়টা আশির দশক। দলমায় মাইনিং শুরু হয়েছে। সেই সময় কয়েকটা হাতি কাঁকড়াঝোড় হয়ে ঝাড়গ্রামে ঢুকে পড়ে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও খাবার দেখে বেশ কিছুদিন এলাকায় থাকার পর ফের ফিরে যায় দলমায়। পরবর্তীকালে কাঁকড়াঝোড় হয়ে মালাবতীর জঙ্গল হয়ে কংসাবতী নদী পেরিয়ে লালগড় হয়ে ফের কংসাবতী নদী পেরিয়ে ঝাড়গ্রাম ও মানিকপাড়ার সংলগ্ন এলাকায় দিয়ে হাতির দল চলে যেত সাঁকরাইল হয়ে নয়াগ্রামের দিকে। কয়েক মাস এলাকায় থাকার পর কিছু হাতি এই পথেই ফিরে যেত দলমায়। আবার কিছু হাতি ওড়িশায় হয়ে ঢুকে পড়তো ঝাড়খন্ডের দলমায়। প্রায় কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে হাতি এইভাবে যাতায়াত শুরু করল।
সময় যত গড়িয়েছে হাতির নতুন নতুন দল জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জেলায় নতুন নতুন করিডর করে যাতায়াত শুরু করে। ঝাড়গ্রাম জেলায় ৪টি বন বিভাগ রয়েছে। ঝাড়গ্রাম, খড়গপুর, মেদিনীপুর এবং রূপনারায়ণ বন বিভাগ। এই ৪টি বন বিভাগের মধ্যে বর্তমানে ৮ থেকে ১০টি হাতির দল রয়েছে। কোনও দলে ৩০ টি, কোনও দলে আবার ৫টি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দলছুট হাতি।
দিনের পর দিন ক্রমশ বাড়ছে হাতি এবং মানুষের সংঘাত। হাতির হানায় যেমন মানুষের মৃত্যুর মিছিল চলছে, ঠিক তেমনি হাতির মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। ঝাড়গ্রাম ব্লকের গড়শালবনি এলাকার বাসিন্দা শ্যামসুন্দর মাহাতো বলছেন, ‘হাতি মানুষ দেখলে প্রাণে মেরে ফেলার জন্য তেড়ে আসছে। বিগত আট-নয় বছরের মধ্যে হাতি এবং মানুষের মধ্যে এত সংঘাত হয়েছে যার ফলে হাতি আমাদের শত্রু বলে মনে করছে। মাঠে গরু, ছাগলের পাশ দিয়ে হাতি চলে যাচ্ছে তাদের উপর কোন আক্রমণ করছে না অথচ আমাদের দেখলেই মারার জন্য ছুটে আসছে।’