• ঘরে সাপ! ত্রাতা নবদ্বীপ পুরসভার কর্মী মহাদেব
    বর্তমান | ৩১ আগস্ট ২০২৪
  • 1সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: রাত সাড়ে ১০টায় ফোন মহাদেব সাহার কাছে, দাদা বাড়িতে সাপ ঢুকেছে। মোটর সাইকেল নিয়ে নবদ্বীপ প্রাচীন মায়াপুর অষ্টম লেনে নিতাই দেবনাথের বাড়িতে দ্রুত পৌঁছে গেলেন মহাদেব। ঢুকেছিল বিষধর কালাচ সাপ। পৌঁছেই বাড়ির শিশু ও মহিলাদের সরিয়ে নিয়ে যেতে বললেন। তারপর শুরু হল সাপের খোঁজ। এদিক ওদিক অনুসন্ধান করে অবশেষে খুঁজে পেলেন কালাচটিকে। মাথা ঠান্ডা রেখে স্নেক ক্যাচার দিয়ে চেপে ধরলেন সাপের গলাটা। সাপটিও বাঁচবার জন্য চেষ্টা করেছিল। বিভিন্ন কায়দায় সাপটাকে ধরে ফেলে প্লাস্টিক কৌটোয় পুরে ফেললেন মহাদেব। এরপর বনদপ্তরকে খবর দিয়ে তাদের হাতে সাপটি তুলে দিলেন। এই মহাদেব সাহাকেই নবদ্বীপে ‘সাপবাবু’ বলে চেনেন লোকে। 


    মহাদেববাবুর বাড়ি নবদ্বীপ পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কপালিপাড়ার শ্যামনগরে। বয়স ৫৬ বছর। তাঁর আরও একটি পরিচয়, তিনি নবদ্বীপ পুরসভার পূর্ত বিভাগের কর্মী। ১৯৯০ সালে পুরসভার অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কর্মজীবন শুরু। ২০০০ সালে তিনি স্থায়ী হন। তবে চাকরির পাশাপাশি নিজের আর আশপাশ এলাকার সাপ ধরে বেরানোটা তাঁর নেশা। সেই কারণে লোকজনের কাছে ‹ সাপবাবু ‹ বলেই পরিচিত।  একটা সময় ছিল মহাদেববাবু  সাপ দেখলেই মেরে ফেলতেন। তারপর হঠাৎই তাঁর মনে পরিবর্তন আসে। ভেবে দেখেন, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গেলে সাপ, ব্যাঙ, কীটপতঙ্গ সকলেরই বেঁচে থাকা প্রয়োজন। সে কারণে সাপ না মেরে ধরতে শুরু করেন। এই খবর জানাজানি হতেই অধিকাংশ মানুষের কাছে তাঁর ফোন নম্বর পৌঁছে গিয়েছে। তাঁরাই ফোন করেন। তবে সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অফিস ডিউটি চলে। সেই সময় যদি কোন সাপ ধরার ফোন আসে তখন অন্য কথা। মানুষ খুব আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে তাই তখন পুরসভার চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। মহাদেববাবু বলেন, অসংখ্য সাপ ধরেছি। গোখরো, চন্দ্রবোড়া, কালাচের মতো বিষধর সাপ। তবে যেখান থেকে সাপের খোঁজ পাই, সেখানে গিয়ে প্রথমে সাপটা ধরে কৌটোবন্দি করি। তারপর বাড়ির লোকজনকে সাপের সম্বন্ধে কিছুটা ধারণা দিই। নবদ্বীপ এলাকায় মূলত তিন প্রজাতির বিষধর সাপ দেখতে পাওয়া যায় গোখরো, কেউটে, আর চন্দ্রবোড়া। আর কালাচ সাইলেন্ট কিলার। 


    সেই ১৯৯৯ সাল থেকে সাপ ধরে চলেছেন মহাদেববাবু।  নিজের নকশায়ে বানানো স্নেক ক্যাচার বগলদাবা করে বেরিয়ে পড়েন। জীবনে ঝুঁকি নিয়ে সেই সাপ ধরেন। কখনও বনদপ্তরের হাতে তুলে দেন। কখনও বা লোকালয়হীন নির্জন কোনও জঙ্গলে ছেড়ে দেন।মহাদেববাবু বলেন, বাড়িতে স্ত্রী এবং দুই ছেলে আছে। প্রথম দিকে বাড়ির লোকেরা ভয় পেত এবং আপত্তিও করত। তবে এখন ওরাও অনুপ্রাণিত করে। এই সাপ ধরার কারণে অনেকেই আমাকে সাপবাবু বলেন। কেউ বা রসিকতা করে বলেন সাপুড়ে। সাপ ধরতে রাতের বেলাতেই বেশি ডাক পড়ে। আমি বইপত্র পড়াশোনা করে এবং টিভি দেখে এই সাপ ধরার কৌশল  শিখেছি।


    • নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)