সংবাদদাতা, ঘাটাল: জলনিকাশি নিয়ে দুই এলাকার বিরোধ। তার জেরে দাসপুর-১ ব্লকে কয়েকশো বিঘা জমির ধান নষ্ট হতে বসেছে। সালামপুর গ্রামের চাষিরা এনিয়ে বারবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাতেও সুরাহা না হওয়ায় বর্ষা শুরুর সময় থেকেই তাঁরা বারবার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
বিডিও দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ওই এলাকায় একটি খালের জলনিকাশি নিয়ে বহুদিন ধরে সমস্যা রয়েছে। আমি শুক্রবার এলাকায় গিয়েছিলাম। খালটি সংস্কারের বিষয়ে সেচদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা হবে।
সালামপুর গ্রামের একদিক দিয়ে কংসাবতী নদী বয়ে গিয়েছে। ওই নদী থেকে একটি খাল কালিদপুর, রত্নাপুর, জয়কৃষ্ণপুর হয়ে ভসরার খালে মিশেছে। সালামপুরের দিকটি তুলনামূলকভাবে উঁচু। জয়কৃষ্ণপুরের দিকটি নিচু। খালের দৈর্ঘ্য কমবেশি তিন কিলোমিটার। কাদিলপুরে ও রত্নাপুরে ওই খালে একটি করে গেট রয়েছে। গেট বন্ধ করে দিলে নীচের দিকে জল নামা বন্ধ হয়ে যায়। সালামপুরের বাসিন্দা নিশীথ সানকা, উত্তম মান্না, ভীমচরণ খাঁড়াদের অভিযোগ, রত্নাপুর ও কাদিলপুরের কিছু বাসিন্দা বর্ষার সময় জোর করে খালের দু’টি গেট বন্ধ করে দেয়। এতে জল নামতে না পেরে সালামপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। বর্ষার মরশুমে চাষিরা ধান রোপণ করলেও কিছুদিনের মধ্যেই প্রায় হাজার বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে যায়।
নিশীথবাবু বলেন, প্রায় তিন দশক ধরেই এখানকার চাষিরা ধান রোয়ার কাজ করলেও কাস্তে নিয়ে ধান কাটতে যাওয়ার সুযোগ পান না। প্রত্যেক বছর চাষিদের প্রচুর ক্ষতি হয়।
সালামপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, তিন-চারটি গ্রামের জলনিকাশের জন্য ওই খালটি কাটা হয়েছিল। গেট দু’টি বন্ধ না রাখলে কোনও গ্রামেরই ক্ষতি হবে না। কিন্তু রত্নাপুর, সৌলান সহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ তাঁদের চাষের ক্ষতি করতে গেট বন্ধ রাখছেন বলে অভিযোগ। নিশীথবাবু বলেন, চাষের ক্ষতির প্রতিবাদে আমরা মঙ্গলবার সরবেড়িয়া-১ পঞ্চায়েতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছি।
ওই এলাকার এক তৃণমূল নেতার অভিযোগ, সৌলান ও রত্নাপুর এলাকায় পঞ্চায়েতের প্রাক্তন ও বর্তমান প্রধানদের বাড়ি। খালের জলস্ফীতির কারণে তাঁদের এলাকায় যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সেজন্য তাঁদের মদতে গেট বন্ধ রাখা হয়। যদিও ওই পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান বিশ্বনাথ বারি ও বর্তমান প্রধান মৌমিতা মুণ্ডা জানান, তাঁদের ইন্ধনে গেট বন্ধ থাকে না। এলাকার কিছু মানুষ ভাবেন, গেট খোলা রাখলে চার-পাঁচটি গ্রামের জমির ধান নষ্ট হবে। কিন্তু আসলে গেট বন্ধ রাখলে একটি গ্রামেরই কৃষকদের চাষে ক্ষতি হয়। ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, খালটি সংস্কারের জন্য সেচদপ্তরের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া হবে। খাল সংস্কার হলেই সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে।