• শাসক দলের অঞ্চল নেতার বুকে লাথি, অভিযুক্ত দলেরই উপপ্রধান
    বর্তমান | ৩১ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: দলের অঞ্চলস্তরের এক নেতার বুকে লাথি মারার অভিযোগ উঠল তৃণমূলেরই উপপ্রধানের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা বীরভূমে। অভিযুক্ত ওই উপপ্রধানের এহেন ঔদ্ধত্য নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। নিন্দার ঝড় বইছে সর্বত্র। ‘বর্তমান’ অবশ্য এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি। জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেছেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। ওখানকার নেতৃত্বকে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলেছি। কেন লাথি মারার ঘটনা ঘটল, তা জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ 


    বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে সাঁইথিয়া থানার বনগ্রামের দহিয়া গ্রামে। সেখানকার একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা মারছিলেন গোপীবল্লভ মণ্ডল ওরফে বাবন। তিনি দলের স্থানীয় সংগঠনের অঞ্চল সম্পাদক। অভিযোগ,তখনই তাঁর উপর চড়াও হন উপপ্রধান তুষারকান্তি মণ্ডল। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তুষারবাবু আচমকা ছুটে এসে বাবনকে মারধর করতে শুরু করে। তারপর সটান বুকে লাথি মারেন। এই দৃশ্য দেখে চায়ের দোকানে বসে থাকা সকলেই হকচকিয়ে যান। সিসি ক্যামেরাতেও সেই ছবি ধরা পড়ে। সেটাই ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। উল্কার গতিতে ভাইরালও হয়ে যায়।  কিন্তু দলের এক নেতার উপর উপপ্রধানের কেন এই হামলা? জানা যায়, তুষারবাবুর প্রতিবেশী বাবন। কিন্তু দলের গোষ্ঠী সমীকরণে দু’জনের মধ্যে ঝামেলা দীর্ঘদিনের। বাবন আসলে অঞ্চল সভাপতি অরবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে টমের অনুগামী। টম আবার বর্তমান ব্লক সভাপতি সাবের আলি খানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। অন্যদিকে, উপপ্রধান তুষারবাবু এই সমীকরণের বাইরে। বহু দিন ধরে তাঁর  সঙ্গে নেতৃত্বের মনোমালিন্য সর্বজনবিদিত। গত মাসে পঞ্চায়েত অফিসে দুই পক্ষের হাতাহাতিও হয়েছে। তুষারের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তিনি বনগ্রামের অধীন কুনলা মৌজায় প্রায় ৬৫ বিঘা খাস জমি দখল করে গায়ের জোরে চাষ করছেন। এই নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বারবার প্রশাসনের দারস্থ হলেও কোনও সুরাহা মেলেনি। ফলে তুষারবাবুর সঙ্গে এলাকাবাসীর একটা ঠান্ডা লড়াই চলছে। এর মধ্যেই পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনে দলের নির্দেশকে উপেক্ষা করে তুষারবাবু নিজে উপপ্রধান হওয়ার পাশাপাশি প্রধান পদেও নিজের কাছের মানুষকে বসান। তাঁর এই আচরণ দলের স্থানীয় নেতারা ভালোভাবে নেননি। সম্প্রতি তুষারবাবুর বিতর্কিত খাস জমি দখলের বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনতে সচেষ্ট হয়ে ওঠেন স্থানীয় নেতারা। বাবনও উপপ্রধানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলতেন। সেই রাগেই বাবনের উপর উপপ্রধান চড়াও হলেন বলে মনে করছে তৃণমূলের একাংশ। 


    যদিও এই নিয়ে তুষারবাবু সংবাদমাধ্যমের সামনে কিছু বলতে চাননি। মেসেজেরও জবাব দেননি।  অন্যদিক,  বাবনদের অভিযোগ, ওইদিন উপপ্রধান হাজির হয়ে গালিগালাজ শুরু করেন। তেড়ে মারতে আসেন। বাধা দিতে গেলে তাঁকে লাথি মারতে থাকেন। রাতেই সাঁইথিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বাবন। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সাবের আলি খান বলেন, ‘মনে হয় ব্যক্তিগত আক্রোশের ঘটনা। দলের উচ্চ নেতৃত্বকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এবার পাকাপাকি কিছু একটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 


    ঘটনার ফায়দা তুলতে মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপি। দলের বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘উনি সরকারি জমি দখল করে ভোগ করছেন। উপরতলার নেতারা ভাগ পাচ্ছেন বলে কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এর জবাব একদিন মানুষই দিয়ে দেবে।’
  • Link to this news (বর্তমান)