• অবৈধ নির্মাণের ছড়াছড়ি, রাস্তা দখল করে ইমারতি সামগ্রীর ‘গোডাউন’, প্রোমোটার-রাজে অতিষ্ঠ দক্ষিণ দমদম
    বর্তমান | ৩১ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর:  স্নানের সময় নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে খসে পড়া ইট মাথায় পড়েছিল। গুরুতর জখম হয়েছিলেন দক্ষিণ দমদমের এক বাসিন্দা। শুক্রবার তাঁর শারীরিক অবস্থা আরও সঙ্কটজনক হয়েছে। চিকিৎসকরা পরিবারকে স্পষ্ট জানিয়েছেন, যে কোনও মুহূর্তে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। এই আবহে রমরমিয়ে চলা প্রোমোটার-রাজ নিয়ে শহরবাসীর ক্ষোভ চরমে উঠেছে। তাঁদের অভিযোগ, স্থানীয় মানুষ এসব সমস্যা নিয়ে সরব হলেই হুমকির মুখে পড়তে হয়। স্থানীয় কাউন্সিলার বা পুরসভাকে জানিয়ে কোনও লাভ হয় না। তবে পুরসভার তরফে এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

    বুধবার সকালে মাথায় ইট পড়ে জখম হন মানস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নং তানোয়ার কলোনিতে। এক বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী মানসবাবু বর্তমানে বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। শুক্রবার তাঁর বাড়ির এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, নির্মীয়মাণ ওই আটতলা বাড়ির সামনের রাস্তা কার্যত ইমারতি সামগ্রীর গোডাউনের চেহারা নিয়েছে। রাস্তার দু’দিক দখল করে রাখা হয়েছে বালি। ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘সুরক্ষা বিধির কোনও বালাই নেই। এভাবেই কাজ চলছে দিনের পর দিন। উপর থেকে ইট ও বালি প্রায়শই পড়ত। বারবার বলেও লাভ হয়নি।’ এমনকী, ওই জায়গায় আটতলা বাড়ির প্ল্যান কীভাবে অনুমোদন পেল, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। দুর্ঘটনার পর অভিযুক্ত প্রোমোটার মোবাইলের সুইচ বন্ধ করে রেখেছেন। অথচ এতবড় ঘটনার পরও পুলিস ও প্রশাসনের কোনও হেলদোলই নেই। মানসবাবুর ভাই সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এর আগেও উপর থেকে ইট-বালি পড়েছে। যদি সামান্য কিছুটা আচ্ছাদন দিয়ে ওরা কাজ করত, তাহলেও দাদার আজ এই অবস্থা হতো না। এখন ভগবানই আমাদের একমাত্র ভরসা।’ 

    শুধু তানোয়ার কলোনি নয়, দমদম রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলির বিভিন্ন রাস্তায় বালি ও ইমারতি সামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে। নিয়ম ভেঙে গজিয়ে উঠেছে একের পর এক বহুতল। পুরসভা সব জেনেও কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে রয়েছে বলে অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, ‘নানা অনুষ্ঠান, উৎসব, নেতাদের মনোরঞ্জন ও বিলাসব্যাসনের বড় অংশ আসে এই প্রোমোটারদের পকেট থেকে। তাঁরাই এ শহরের গৌরি সেন! এছাড়া প্ল্যান অনুমোদন, অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের মতো নানা পর্যায়ে ধাপে টাকা  আদায় হয়। কয়েকজন নেতা আবার কিছু প্রোমোটারের সঙ্গে অলিখিত পার্টনারশিপ চালান। তাই তাঁদের যাবতীয় অন্যায় দেখেও চোখ বন্ধ রাখাটাই রীতি। শহরবাসীর সুরক্ষা নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই।’ এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য পুরসভার চেয়ারম্যান কস্তুরী চৌধুরীকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজেরও জবাব দেননি তিনি।
  • Link to this news (বর্তমান)