• রাজ্যের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট কম? তথ্য সহ নয়া চিঠিতে কেন্দ্রের দাবি নস্যাৎ মমতার
    বর্তমান | ৩১ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও নয়াদিল্লি: ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচারের জন্য কড়া কেন্দ্রীয় আইন তৈরির দাবিতে ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগেও তিনি একই দাবিতে চিঠি দিয়েছিলেন। তার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়েছিল, রাজ্য ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরিতে পিছিয়ে রয়েছে। এবার সেই অভিযোগও খারিজ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে ফাস্ট ট্র্যাক বিশেষ আদালত তৈরি সহ কয়েকটি বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যেসব খামতির উল্লেখ করেছিলেন, তার জবাবও দিয়েছেন তিনি। লিখেছেন, রাজ্যে ইতিমধ্যেই ৮৮টি ফাস্ট ট্র্যাক বিশেষ আদালত ও ৬২টি পকসো আদালত কাজ করছে। বিশেষ আদালতগুলির বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তা মেটাতে কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। রাজ্যে ১১২ এবং ১০৯৮ নম্বরে হেল্পলাইন কার্যকর আছে বলেও উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার চিঠিটি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। শুক্রবার নবান্নের তরফে তা প্রকাশ করা হয়। এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ ব্রায়েন সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, চালু ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের সংখ্যার নিরিখে দেশের সমস্ত রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ তৃতীয় স্থানে রয়েছে। কেন্দ্রই সংসদে এই তথ্য জানিয়েছে। 

     আর জি কর কাণ্ড নিয়ে ২২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীকে প্রথম চিঠিটি পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছিলেন, ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধের ঘটনায় অপরাধীদের দ্রুত কড়া শাস্তি দেওয়ার জন্য বিশেষ ফাস্ট ট্র্যাক আদালত গঠন করতে কেন্দ্রীয় সরকার আইন আনুক। ওই আদালতে ১৫ দিনের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রস্তাবও দেন। এই চিঠির কোনও জবাব প্রধানমন্ত্রী নিজে দেননি। কিন্তু দু’দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী একটি চিঠি পাঠান মুখ্যমন্ত্রীকে। ওই চিঠিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, মহিলাদের উপর অপরাধ সংক্রান্ত মামলার বিচারের জন্য এখন যে আইনি ব্যবস্থা আছে সেটাই যথেষ্ট। একই সঙ্গে নারীঘটিত অপরাধের বিচার ও অভিযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজ্যের কিছু খামতির কথাও তুলে ধরেন তিনি। এবার সেই দাবি তথ্য সহ নস্যাৎ করে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো দ্বিতীয় চিঠিতে তিনি ফের উল্লেখ করেছেন, ধর্ষণ-খুনের মতো অপরাধের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে কড়া কেন্দ্রীয় আইন প্রয়োজন। এরকম স্পর্শকাতর বিষয়ে লেখা প্রথম চিঠির জবাব যে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর থেকে মেলেনি চিঠিতে তার উল্লেখ করেছেন মমতা। 

    এদিনও মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিতীয় চিঠির কোনও জবাব দেননি প্রধানমন্ত্রী। তবে শুক্রবার রাতে পাল্টা চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী। ধর্ষণ ও খুনের অপরাধে মমতা ফাঁসির দাবি জানালেও কেন্দ্র যে সেপথে হাঁটছে না তা ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। তাঁর সাফাই, ধর্ষণ ও হত্যার শাস্তি ১০ বছর অথবা যাবজ্জীবন জেল। ন্যায় সংহিতা আইনে তার উল্লেখ রয়েছে, সেটাই কঠোরতম। এছাড়া, ফাস্ট ট্র্যাক বিশেষ আদালত নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর দাবির বিরোধিতা করেছেন ওই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সেইসঙ্গে পরিসংখ্যান তুলে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে বিপুল সংখ্যক মামলা জমে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন অন্নপূর্ণা দেবী। দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী লিখেছেন, এফআইআরের দু’মাসের মধ্যে চার্জশিট দেওয়ার নিদান দেওয়া আছে আইনে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে সিবিআইকেই আর জি কাণ্ডের চার্জশিট দিতে হবে। এফআইআরের পর ইতিমধ্যেই ১৫ দিন অতিক্রান্ত। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই চিঠিতে প্রবল চাপে পড়ল সিবিআই। আর জি কর কাণ্ড সমাধানে তাদের হাতে বাকি রইল ৪৫ দিন। প্রসঙ্গত, এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এফআইআর হয় সন্দেশখালি কাণ্ডের। কিন্তু, এখনও চার্জশিট হয়নি। মন্ত্রীর চিঠির পর সেই নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)