• স্থায়ী ধর্নামঞ্চের পথে আরজি করের প্রাক্তনীরা
    এই সময় | ৩১ আগস্ট ২০২৪
  • এই সময়: জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলছেই। আরজি করের পাশাপাশি বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজেই অবস্থান মঞ্চ করে চলছে আন্দোলন। সেই আন্দোলনকে আরও বৃহত্তর পরিসরে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আরজি করের প্রাক্তনীরা এ বার শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে একটি স্থায়ী ধর্নামঞ্চ তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেছেন।যদিও শুক্রবার রাত পর্যন্ত বিষয়টি পরিকল্পনা স্তরেই রয়েছে। সব ঠিক থাকলে আগামী বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা থেকে শুরু হবে সেই মঞ্চে লাগাতার অবস্থান। শুধু চিকিৎসকই নয়, সেখানে সমাজের সব স্তরের মানুষকে একত্রিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

    আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, পরের দিন বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের খুন-ধর্ষণের মামলার শুনানি রয়েছে। সেখানে আশানুরূপ কোনও বিচার না মিললে, সিবিআই তদন্তের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে কিছু না জানা গেলে কিংবা রাজ্য সরকারের অবস্থান ইতিবাচক না দেখলে, আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে একযোগে অনশনের পথেও হাঁটতে পারেন জুনিয়র ও সিনিয়র ডাক্তাররা।

    আরজি করের ১৯৯৪ ব্যাচের প্রাক্তনী চিকিৎসক সুমনা মজুমদারের কথায়, ‘আমরা এখন প্রচার চালাচ্ছি, যাতে যত বেশি সম্ভব মানুষকে প্রস্তাবিত ধর্নামঞ্চে জড়ো করতে পারি। তবে পুরোটাই রয়েছে পরিকল্পনা স্তরে। তাতে অনশন আন্দোলনের প্রসঙ্গ উঠেছিল। তবে সেই প্রস্তাব নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।’

    চিকিৎসক সংগঠন ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের সভাপতি তথা ছ’টি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের অন্যতম কর্তা কৌশিক চাকী শুক্রবার জানান, স্থায়ী ধর্নামঞ্চ তৈরির কথা চলছে ঠিকই। তবে সেটা ঠিক কোথায় হবে, শ্যামবাজারেই হবে নাকি অন্যত্র, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এর সঙ্গে পুলিশি অনুমতি-সহ নানা আইনি দিক জড়িয়ে রয়েছে।

    একই ভাবে অনেক আন্দোলনরত চিকিৎসকই আবেগের বশে অনশনে নামতে আগ্রহী। কিন্তু সে ব্যাপারেও এখনও কোনও পাকাপাকি ঐক্যমতে পৌঁছানো যায়নি। তবে আন্দোলন নিয়ে কৌশিক আশাবাদী, ‘যে ভাবে সাধারণ মানুষ সমর্থন করছেন, তাতে এটা আর শুধু ডাক্তারদের আন্দোলন নেই। সকলের আন্দোলন, বিশেষ করে মহিলাদের প্রতিক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে।’

    কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবিতে আগামী সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর লালবাজার অভিযানের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। পরের দিন মঙ্গলবার, বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একদিনের কর্মবিরতিতে নামারও আহ্বান জানাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের সাফ বক্তব্য, পাঁচ দফা দাবি না-মেটা পর্যন্ত জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলবে।

    বৃহস্পতিবার রাতে আন্দোলনকারী ওয়েস্টবেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের জেনারেল বডি মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকালে প্রেস বিবৃতিতে তাঁরা আগামী কয়েক দিনের কর্মসূচির কথা জানান। বিশেষ করে কাজে ফেরার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ‘হুঁশিয়ারি’র পরে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা জানান, তাঁদের পাঁচ দফা দাবি না-মানা পর্যন্ত তাঁরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন না।

    তার মধ্যে সবচেয়ে জোরালো দাবি হলো — তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় সব দোষীদের চিহ্নিত করা, যারা বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল তাদের গ্রেপ্তার করা এবং প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সাসপেনশন ও বিনীত গোয়েলের ইস্তফা। সব মেডিক্যাল কলেজে ভয়মুক্ত পরিবেশের দাবিও তুলেছেন তাঁরা।

    জেনারেল বডি বৈঠকে আলোচনায় ওঠে, এখনও কী ভাবে মেদিনীপুর, বর্ধমান, উত্তরবঙ্গ ও বারাসত মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক ও পড়ুয়ারা ক্ষমতাবান গোষ্ঠীর হুমকির মুখে লড়ছেন। তাঁদের স্থানীয় ভাবে প্রতিবাদ সংগঠিত করতে বলা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, যাঁরা তিন মাসের বাধ্যতামূলক রুরাল পোস্টিংয়ে আছেন, তাঁদের কোনও সমস্যা হলে তা জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টকে জানাতে। প্রয়োজনে আইনি সহায়তার রাস্তায় হাঁটবে ফ্রন্ট।
  • Link to this news (এই সময়)