পেরোল পাঁচ বছর, নিজেদের বাড়ির জন্য এখনও অপেক্ষায় বৌবাজারের ক্ষতিগ্রস্তরা
আনন্দবাজার | ৩১ আগস্ট ২০২৪
কেটে গেল দীর্ঘ পাঁচ বছর। কিন্তু ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরাপাড়া লেনে যে ২৬টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিল, এখনও ফিরতে পারলেন না সেই সব বাড়ির বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, ঘটনার পরেই প্রশাসনের তরফে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, দু’বছরের মধ্যে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। অথচ, গাঁথা হয়নি একটি ইটও। পাঁচ বছরে প্রতিশ্রুতি ছাড়া মেলেনি কিছুই।
২০১৯ সালের ৩১ অগস্ট। সেই রাতের আতঙ্ক এখনও ভুলতে পারেননি ৮বি, সেকরাপাড়া লেনের বাসিন্দা আশিস সেন। তার পর থেকে কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটে একটি ফ্ল্যাটে ভাড়ায় রয়েছেন তিনি। আশিস বলেন, ‘‘মেট্রো শুধু বাড়ি ভাড়া দিয়েই দায়িত্ব সেরেছে। কবে আমরা বাড়ি ফিরব, তার কোনও সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। ২০১৯ সালে প্রশাসন ও মেট্রো বলেছিল, ২০২১ সালে নিজের বাড়ি ফিরে পাব। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ২০২৬ সালেও কি ফিরতে পাব বাড়িতে?’’
পরিবারের সঙ্গে বেলেঘাটার ভাড়া বাড়িতে রয়েছেন ২ নম্বর দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা সোনাক্ষী সরকার। তিনি বলেন, ‘‘সেই সন্ধ্যায় সাড়ে ৭টায় বাড়ি কেঁপে উঠল। দেওয়ালে বড় ফাটল তৈরি হচ্ছে দেখে হোটেলে আশ্রয় নিয়েছিলাম। পরের দিন গিয়ে দেখি, আমাদের দোতলা বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত হোটেলে ছিলাম। পরে মেট্রো এই ভাড়া বাড়ির ব্যবস্থা করে দিল।’’ ১০/২ সেকরাপাড়া লেনের বাসিন্দা সঞ্জয় সেন এখন যদুনাথ দে রোডের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। তাঁর বাড়িও পুরো ভেঙে পড়েছিল। সঞ্জয় বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসনের কাছে বার বার গিয়েছি। কোনও কাজ হয়নি।’’
আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি বাড়ি অবশ্য মেরামত করে দিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। মেরামত করা কয়েকটি বাড়ির বাসিন্দারা ফিরে এসেছেন। কেউ কেউ এখনও ফেরেননি। তাঁরা জানিয়েছেন, পুজোর আগে বা পুজো মিটে গেলে ফিরবেন। তবে ওই বাসিন্দাদের অভিযোগ, মেরামতির মান খুব ভাল নয়। মেট্রো কর্তৃপক্ষের পরে তাঁদেরও মেরামতির কাজ করাতে হয়েছে। দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, মেট্রোর কাজের জন্য গত পাঁচ বছর ধরে তাঁদের বাড়ির সামনের রাস্তার অবস্থা বেহাল। প্রয়োজনে অ্যাম্বুল্যান্সও ঢুকতে পারে না।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানান, যে সব বাড়ি পুরো ভেঙে পড়েছিল, সেগুলি নির্মাণের জন্য দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। নকশা পুরসভায় পাঠানো হয়েছে। দ্রুত বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। ভাঙা বাড়ির বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি, আর আশ্বাস নয়, এ বার কাজ করে দেখাক মেট্রো ও প্রশাসন।