ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসা কি বন্ধ হয়নি বাংলায়? বাঁকুড়ার শালতোড়ায় মোটরবাইকে থাকা বিস্ফোরক ফেটে আরোহীর মৃত্যুর ঘটনা সেই প্রশ্নই উস্কে দিচ্ছে। পুলিশ জানায়, গতকাল, শুক্রবার সন্ধ্যায় শালতোড়া থানা এলাকার ঝনকায় ওই বিস্ফোরণ হয়। তাতে মৃত্যু হয় জয়দেব মণ্ডল নামে ওই মোটরবাইক আরোহীর। জয়দেবের বাড়িও ঝনকা এলাকায়।পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শালতোড়ার লাপাহাড়ি এলাকায় দিয়ে মোটরবাইক চালিয়ে যাচ্ছিলেন ওই যুবক। আচমকাই বিস্ফোরণের জেরে মোটরবাইক থেকে রাস্তায় ছি্টকে পড়েন তিনি। মোটরবাইকটিও পুড়ে যায়। গুরুতর জখম হন জয়দেব। বিস্ফোরণের আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে ঘটনাস্থলে যান এলাকার লোকজন।
তাঁরা জয়দেবকে উদ্ধার করে স্থানীয় শালতোড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে পরে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
তবে তদন্তকারীদের একাংশ জানান, শালতোড়া এলাকা রুক্ষ। এখানে কৃষিকাজ তেমন হয় না বললেই চলে। বেশ কয়েকটি পাথর খাদান রয়েছে এলাকা জুড়ে। সেই সব খাদানে কাজ করেই রোজগার করেন এলাকার বেশির ভাব বাসিন্দা। পাথরের বড় বড় চাঁই ভাঙার জন্য জিলেটিক স্টিক বা ডিনামাইট ব্যবহার করে বিস্ফোরণ ঘটাতে হয়। বাইরে থেকে চোরাপথে ডিনামাইট বা জিলেটিন স্টিক আনান পাথর খাদানের মালিকরা।
মোটরবাইকে ডিনামাইট বা জিলেটিন নিয়ে যাওয়ার সময় তা কোনও ভাবে ফেটে গিয়ে মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান। তবে, পাথর খাদানের জন্য বিস্ফোরক নিয়ে যেতে গিয়ে দুর্ঘটনা, না বড় ধরনের নাশকতার ছক বা এর পিছনে রাজনৈতিক হিংসার কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তদন্তকারীরা জানান।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি জানান, মোটরবাইকে কী ছিল, কীভাবে বিস্ফোরণ হল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মোটরবাইকে বিস্ফোরক ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে।
বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এক্স হ্যন্ডেলে ঘটনাস্থলের একটি ছবি শেয়ার করে অভিযোগ করেন এলাকায় বেআইনি ভাবে খননকাজের জন্য ওই ব্যক্তি মোটরবাইকে ডিনামাইট নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার ফলেই ওই বিস্ফোরণ ঘটে। এক্স হ্যান্ডেলে শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, পুলিশ ঘটনা ধামাচাপা দিতে দ্রুততার সাথে দেহ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করে। একই অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউরিও।
তবে শালতোড়া ব্লক তৃনমুল কংগ্রেসের সভাপতি সন্তোষ কুমার মণ্ডল দাবি করেন, ওই এলাকায় খাদানগুলিতে পাথর ভাঙার জন্য বিস্ফোরণ ঘটানোর কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।