এই সময়: ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ডাকা নবান্ন অভিযান নিয়ে বিতর্ক থামছেই না। কলকাতা পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ এখনও চলছে। এই টানাপড়েনের মধ্যে ‘ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ জমায়েত’-এ পুলিশের ‘অতিসক্রিয়তা’ নিয়ে শুক্রবার কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে নোটিস পাঠাল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ওই নোটিসের সূত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে তার জবাব দিতে বলা হয়েছে।এর আগেই বৃহস্পতিবার বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উচিত এই ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে নোটিস পাঠানো। ‘এক্স’ হ্যান্ডলে মালব্যের এই পোস্টকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। অমিত লিখেছেন, সে দিন পুলিশ মানুষের সঙ্গে কুকুরের থেকেও খারাপ ব্যবহার করেছিল।
এর কারণ, ডিউটি শেষে কলকাতা পুলিশের এক মহিলা অফিসার সে দিন নিজের টিফিন একটি পথকুকুরের ছানার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন বলে একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে। যদিও আরজি কর ইস্যুতে ন্যায়বিচার চেয়ে পথে নেমেছেন, এমন অনেকেই মালব্যের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
গত মঙ্গলবার আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’। গোড়া থেকেই রাজ্যের শাসকদল দাবি করেছিল, অরাজনৈতিক মোড়কে আসলে এই কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিজেপি এবং আরএসএস। নবান্ন অভিযানে পুলিশের লাঠিচার্জ এবং দমনপীড়নের প্রতিবাদে বুধবার বিজেপি রাজ্যে ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্ধের ডাকও দিয়েছিল।
নবান্ন অভিযানকে ঘিরে হাওড়া ও কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনাও ঘটে। আন্দোলনকারীদের ছোড়া ইটে গুরুতর আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী। পাল্টা পুলিশের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ জমায়েতে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করার অভিযোগ তোলেন আন্দোলনকারীরা।
এই ঘটনায় কমিশনের হস্তক্ষেপ দাবি করে চিঠি দিয়েছিল ‘ভারতীয় হিউম্যান রাইটস ইনিসিয়েটিভ’ নামের একটি সংস্থা। বিজেপির সাংসদ সৌমিত্র খাঁও কমিশনের হস্তক্ষেপ দাবি করে চিঠি দিয়েছিলেন। কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, পুলিশের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালানোর যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্যি হলে চিন্তার বিষয়।
পুলিশ শান্তিপূর্ণ জমায়েত সরাতে ‘অতিসক্রিয়তা’ দেখিয়েছে কি না, কিংবা দমনমূলক পদক্ষেপ করেছে কি না, কলকাতার সিপির কাছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। কমিশনের বক্তব্য, পুলিশের আচরণ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে কি না, তা সিপিকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
নবান্ন অভিযানের দিন ‘এই সময়’-এর চিত্র সাংবাদিক অর্ণব চক্রবর্তীর ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল কলকাতা পুলিশের এক লেডি এসআই-এর ডিউটি শেষে নিজের টিফিন একটি কুকুর ছানার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার ছবি। কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ সেই ছবিটি সমাজমাধ্যমে শেয়ার করেছিল। তার প্রেক্ষিতেই পাল্টা পোস্টে বিতর্কিত মন্তব্য করেন মালব্য।
এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র বলেন, ‘কুকুরকে খাওয়ানোর জন্য প্রথমেই আমি ওই পুলিশকর্মীকে ধন্যবাদ দেবো। যাঁরা এই তুলনা করছেন, তাঁরা হিন্দু ধর্মের রক্ষাকর্তা হিসেবে নিজেদের জাহির করার চেষ্টা করেন! আমি তাঁদের স্মরণ করিয়ে দেবো, শেষ যাত্রায় যুধিষ্ঠিরকে সঙ্গ দিয়েছিল একটি কুকুর, কোনও মানুষ নয়। এ সব মুর্খের মতো কথা।’
আর এক অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত বলেন, ‘ওই দিনের মিছিলে আমি ছিলাম না, সংবাদমাধ্যমে দেখেছি। যিনি এই মন্তব্য করেছেন, তিনি ধরেই নিয়েছেন যেন কুকুরের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করারই কথা। কেন তা মনে করেন, সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এই তুলনাটা আসবেই বা কেন, সে কুকুর হোক বা পিঁপড়ে? মানুষ হওয়ার জন্য আমি লজ্জিত।’ প্রসঙ্গত, শ্রীলেখা ও দেবলীনা দু’জনেই আরজি করের নির্যাতিতার ন্যায়বিচার চেয়ে সরব হয়েছেন, পথেও নেমেছেন প্রতিবাদে।