বিটি রোডে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত কর্মসূচিতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মোটরবাইকে ঢুকে পড়ার অভিযোগ কলকাতা পুলিশের এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার ভোর ৪টে থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বিটি রোড অবরোধ করেন আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলিশ। ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই ভাইরাল ‘সিভিক কীর্তি’-র সেই ভিডিয়ো (এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি এই সময় অনলাইন)।ভাইরাল ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, 'পুলিশ' লেখা বাইকে সওয়ার ছিলেন ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁকে আন্দোলনকারীরা প্রশ্ন করেন, 'কেন তিনি ব্যারিকেড সরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন?' ওই সিভিক ভলান্টিয়ার কোনও সদুত্তোর দিতে পারেননি। তিনি মদ্যপ অবস্থায় বাইক চালাচ্ছিলেন বলেও অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। এরপর হাতজোড় করে ক্ষমাও চাইতে দেখা যায় ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে।
তাতে আরও উত্তেজিত হয়ে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য ছিল, 'ক্ষমা করে করে আজকে এই পরিস্থিতি।' এরপর সেখানে কলকাতা পুলিশের কর্তৃব্যরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট ব্যারিকেড সরিয়ে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে যেতে দেন ঘটনাস্থল থেকে। ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার ভোর পর্যন্ত সিঁথির মোড়ে প্রতিবাদ করেন আন্দোলনকারীরা। এরপর স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা রুজু করে কাশীপুর থানার পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে। তাঁকে কাজ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। ট্রাফিক সার্জেন্টের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
উল্লেখ্য, এ দিন পুলিশের অনুমতি নিয়ে রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ছবি আঁকা, পথ নাটিকার আয়োজন করে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া এবং প্রাক্তনীরা। ব্যারিকেড করে রাস্তার ওই অংশে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল পুলিশের অনুমতিতে। অভিযোগ, শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ মত্ত অবস্থায় এক সিভিক ভলান্টিয়ার বাইক নিয়ে ব্যারিকেড জমায়েতস্থলে প্রবেশ করে।
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পর পর সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে ওঠা এই ধরনের অভিযোগ ঘিরে শোরগোল। সম্প্রতি আরজি কর কাণ্ডে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হওয়া একটি জনস্বার্থ মামলায় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের নিয়ম মেনে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের আর্জিও জানানো হয়েছিল। সেক্ষেত্রে নিয়োগের আগে একজন প্রার্থীকে মানসিক অবস্থা, শারীরিক ক্ষমতা সহ আরও বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
সম্প্রতি জলপাইগুড়িরবানারহাট থানায় কর্মরত সিভিক ভলান্টিয়ার কিশোর রায়ের বিরুদ্ধে তিস্তার পারে বসে ব্রাউন সুগার সেবনের অভিযোগ ওঠে। সেই 'গুণধর'-কে গ্রেপ্তার করেছিল কোতোয়ালি থানার পুলিশ। গত ১৯ অগস্ট চাপড়া ডিআইবি অফিসে কর্মরত দুই সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সাসপেন্ড করা হয় তাঁদের।
গত বছর খাস কলকাতায় এক ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে। ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন যুবকের পরিবার। রাজ্যের সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা ঠিক কী? মামলাটির প্রেক্ষিতে তা নিয়ে রাজ্যের থেকে বিস্তারিত গাইডলাইন তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা।
গত বছর হাইকোর্টের সেই নির্দেশ মোতাবেক সিভিক ভলান্টিয়ারদের এক্তিয়ার নিশ্চিত করে পুলিশের তরফে একটি সার্কুলার জারি করা হয়। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়, কনস্টেবলরা যে সমস্ত কাজ করেন, সেখানে তাঁদের পরিবর্তে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ব্যবহার করা যাবে না।ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পুলিশকে সহযোগিতা করা ছাড়া ভিড় সামলানো, পার্কিং সমস্যা সমাধানের মেটাতে ব্যবহার করা যাবে সিভিক ভলান্টিয়ারদের।