গত মার্চ মাসে গার্ডেনরিচে বেআইনি নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ায় মুখ পুড়েছিল কলকাতা পুরসভার। আর এ বার কলকাতা পুরসভার অনুমোদনে তৈরি হওয়া নির্মীয়মাণ বাড়ির কাজ আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠল বিল্ডিং বিভাগের বিরুদ্ধে। অনুমোদন প্রাপ্ত নির্মিয়মাণ বাড়ির কাজ আটকে দেওয়া নিয়ে মেয়রের ক্ষোভের মুখে পড়লেন বিল্ডিং বিভাগের শীর্ষ আধিকারিকেরা। ক্ষোভের সুরে মেয়র বলেন, ‘‘আপনাদের ইন্সপেক্টরেরা টাকা খেতে যায় বলেই পুরসভার বদনাম হয়।’’
শনিবার কলকাতা পুরসভার ‘টক টু মেয়র’ কর্মসূচি চলাকালীন বড়বাজার এলাকা থেকে আনমোল পরশরামপুরিয়া নামে এক ব্যক্তি ফোন করেন মেয়রকে। অভিযোগের সুরে ওই ব্যক্তি মেয়রের কাছে অভিযোগ জানান, কলকাতা পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। ২৭৩ নম্বর রবীন্দ্র সরণিতে তাঁর বাড়ির নকশা অনুমোদন করেছে কলকাতা পুরসভা। সেই অনুমতি ক্রমেই তিনি বাড়ি নির্মাণ করাচ্ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি স্থানীয় কয়েক জন ব্যক্তির কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের ইন্সপেক্টরেরা তাঁর বাড়ির নির্মাণকে 'বেআইনি' চিহ্নিত করে তা বন্ধ করে দিয়েছেন। সঙ্গে পুরসভার ৪০১ ধারায় নোটিস ধরিয়েছেন। অথচ কলকাতা পুরসভা অনুমোদিত যাবতীয় বৈধ কাগজপত্র তাঁর কাছেই রয়েছে। বাধ্য হয়েই যে তিনি মেয়রকে ফোন করেছেন, তা-ও জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি।
পুরো বিষয়টি শোনার পর বিল্ডিং বিভাগের ডিজি-সহ উপস্থিতি শীর্ষ আধিকারিকদের মেয়রের প্রবল ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়। ফিরহাদ বলেন, ‘‘দেখুন, আপনাদের রুল ২৫ আছে। একশো শতাংশ কনস্ট্রাকশন করার ক্ষেত্রে একটু উনিশ-বিশ হয় বলেই রুল ২৫ আছে। বিভিন্ন সার্কুলারও আছে। বড়সড় ডেভিয়েশন হলে তবেই ৪০১-এর নোটিস ধরানো হয়। বেআইনি হলে তবেই ৪০১-এর ব্যবহার করা যায়।’’ এর পরেই মেয়র আরও বলেন, ‘‘আপনাদের ইন্সপেক্টরেরা টাকা খেতে যায়। যখন পায় না, তখন এমন হ্যারাসমেন্ট করে। এতে পুরসভার ইমেজ নষ্ট হয়। এমনটা করবেন না। আমি শুধু আপনাকে বলছি না, সব বোরোকে বলছি। মাইনর ডিভিয়েশনে যেখানে রুল ২৫ দিয়ে কাজ হয়ে যাবে, সেখানে ৪০১-এর নোটিস দেবেন না। এটা নিয়ে একটা খেলা শুরু হয়েছে। এতে আপনার এবং আপনার পরিবারের সম্মান জড়িত। সর্বোপরি, পুরসভার সম্মানও জড়িত।’’
‘টক টু মেয়র’ কর্মসূচিতে সব বোরোর দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরাও অংশ নেন। ভার্চুয়াল মাধ্যমে তাঁদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। আর অভিযোগটি আসে বোরো-৪ থেকে। তাই ভার্চুয়াল মাধ্যমেই ওই বোরোর দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের সর্তক করে দেন মেয়র। উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসে নিজের বিধানসভা কলকাতা বন্দরে বেআইনি নির্মায়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছিলেন ফিরহাদ। তার পর থেকেই বেআইনি নির্মাণ নিয়ে পুরসভাকে সক্রিয় হতে বলেছেন তিনি। আর এ বার সেই পুরসভার বিরুদ্ধেই উঠল বৈধ নির্মাণকে আটকে দেওয়ার অভিযোগ।
যদিও পরে সাংবাদিক বৈঠকে এই সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মেয়র বলেন, ‘‘আইন হচ্ছে, একটা বাড়ি করতে গেলে নকশা অনুমোদন করাতে হয়। সে ক্ষেত্রে মাইনর ডিভিয়েশন হয়। সেখানে ইন্সপেক্টরেরা এসে চোখরাঙানি দেয়, আমাকেও দিয়েছিল। এখন আমরা লগ বুক মেনটেন করতে বলেছি। সব রাস্তায় ঘুরছে। কিছু তো একটা করতে হবে। এই সব দাদাগিরি করছে। মাইনর ডিভিয়েশনের জন্য ৪০১ দিচ্ছে। এ সব ক্ষেত্রে রুল ২৬ বা ২৫-এর নোটিস দিয়ে আমরা ব্যবস্থা করে দিই। এরা সেখানে ৪০১ এর নোটি, দিচ্ছে।’’ পুরসভার আধিকারিকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘‘কথায় বলে না, ধরে আনতে বললে বেঁধে আনা। ৪০১ তখনই করা হবে, যখন কিছু বড় বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে। ৪০১ না মানলে ৪০৮ হবে।’’