• অস্ত্রোপচার কার্যত বন্ধ, পরীক্ষা নিরীক্ষার ‘বাহানা’য় ফেরানো হচ্ছে রোগী, ক্ষোভ
    বর্তমান | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: চার মাস আগে অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাঁর বাঁ হাত ভেঙেছিল। ভেঙে যাওয়া জায়গায় গভীর ক্ষত থেকে সংক্রমণ হয়েছিল। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক্সটারনাল ফিক্সিং করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল ঠাকুরগঞ্জের পার্বতী দেবীকে। আজও তাঁর সেই এক্সটারনাল ফিক্সিং খোলা হয়নি। এক্সটারনাল ফিক্সিংয়ের রড, স্ক্রু লাগানো হাত নিয়ে ঘুরে যাচ্ছেন তিনি। ডাক্তারদের কথা মতো শনিবারও তিনি এসেছিলেন ফিক্সিং খোলার জন্য। কিন্তু ফিরিয়ে দেওয়া হয়। হতাশ হয়ে ফিরে যাওয়ার পথে পার্বতী দেবী বলেন, এদিন আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ডাক্তারবাবু জানান এখন ফিক্সিং খোলা যাবে না। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন চলছে।

    রায়গঞ্জ থেকে এদিন সুপার স্পেশালিটি ব্লকে সার্জারি আউটডোরে এসেছিলেন সুশান্ত পাল। তিনি বলেন, রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিন দিন ভর্তি ছিলাম। অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে সেখান থেকে আমাকে এখানে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখানে ডাক্তার ভালোমতো না দেখে কিছু পরীক্ষা করিয়ে আনতে বলেন। ভর্তিও নেওয়া হল না। ব্যথায় আমি দাঁড়াতে পারছি না।

    শিলিগুড়ি মহকুমার লিউসিপাকুরির নূর মহম্মদ বুকের ব্যথার চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন ধরে এখানে ঘুরছেন। এদিন সুপার স্পেশালিটি ব্লকের সামনে তিনি বলেন,  ছ’মাস ধরে বুকে ব্যথা নিয়ে ঘুরছি। কোনওদিন রক্ত পরীক্ষা করে আনতে বলা হচ্ছে। পরের দিন অন্য পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে। গত সপ্তাহে বলা হয় আলট্রাসনোগ্রাফি করতে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আলট্রাসনোগ্রাফি করতে গেলে  একমাস পরে ডেট দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে আলট্রাসনোগ্রাফি করি। সেই রিপোর্ট এদিন নিয়ে এসেছিলাম। এদিন আবার এক্স-রে করে আনতে বলে আমাকে ঘুরিয়ে দেওয়া হল। রিপোর্ট করতে করতে ফাইল ভরে গিয়েছে। তবু সঠিক চিকিৎসা শুরু হল না।

    অভিযোগ, পিজিটি, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে অজুহাত করে অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখতেই এভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষার বাহানায় দিনের পর দিন গরিব রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জেনারেল ও অর্থোপেডিক সার্জারির বহু রোগী  ফিরে যাচ্ছেন। পূর্ব নির্ধারিত অস্ত্রোপচার কার্যত বন্ধ।  উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের রিজিওনাল ব্লাড সেন্টারে রক্তের চাহিদা অর্ধেকেরও কম হওয়ায় এই অভিযোগ জোরাল হয়েছে। এই ব্লাড সেন্টারের ডিরেক্টর মৃদুময় দাস বলেন, আগে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগীদের জন্য দিনে ১০০ থেকে ১১০ ইউনিট রক্তে জোগান দিতে হতো।  গত কয়েকদিন ধরে তা ৪০ থেকে ৫০ ইউনিট হয়েছে। হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, কোল্ড সার্জারি কার্যত বন্ধ। সেকারণেই  রক্তের চাহিদা কমে গিয়েছে।

    হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন,  একটা সার্জারিতে  অনেক সহোযোগী দরকার হয়। পিজিটিরাই সহযোগী হিসেবে ওটিতে  থাকেন।  তাঁরা কর্মবিরতি করায় কোল্ড সার্জারি কমে গিয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)