• উত্তরপত্রে রাজনৈতিক স্লোগান লিখলেই বাতিল পরীক্ষা
    বর্তমান | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: উত্তরপত্রে রাজনৈতিক স্লোগান লিখলে পরীক্ষা বাতিল হতে পারে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার নয়া বিধিতে এই সতর্কবাণী ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, আর জি কর-কাণ্ডের জেরেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। শিক্ষাঙ্গন থেকে ক্রীড়াঙ্গনে যেভাবে প্রতিদিন প্রতিবাদ সংঘটিত হচ্ছে, পরীক্ষার উত্তরপত্রে তার প্রতিফলন ঠেকাতেই এই ব্যবস্থা। তবে সংসদের তরফে এই কারণ অস্বীকার করা হয়েছে। সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘এমন নির্দেশিকা আগেও ছিল। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক কোনও ঘটনার যোগ নেই।’

    উচ্চ মাধ্যমিকে চালু হয়েছে সেমেস্টার পদ্ধতি। সেই মতো পরীক্ষাবিধিও নতুন করে তৈরি করতে হয়েছে। সম্প্রতি এই নয়া বিধি শিক্ষাদপ্তরের অনুমোদনও পেয়েছে। সেখানেই ‘মিসকন্ডাক্ট অর ম্যালপ্র্যাকটিসেস’-এর (১৯ ক্রমতালিকার ‘আর’ পয়েন্ট) অংশ হিসেবে রাজনৈতিক স্লোগানের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে উত্তরপত্র থেকে শুরু করে গোটা সেমেস্টারের পরীক্ষা পর্যন্ত বাতিল হতে পারে। মোট ২৫টি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে, যেগুলি করলে শৃঙ্খলাভঙ্গের আওতায় পড়তে হবে পরীক্ষার্থীদের। অনেক সময় দেখা যায়, উত্তরপত্রে কিছু না লিখে টাকা সেঁটে দিয়েছে কেউ। তাছাড়া উত্তরপত্র কোনওভাবে কাঁটাছেড়া করলে, আলাদা আলাদা পাতায় হাতের লেখা ভিন্ন হলে, লুজ শিটের সংখ্যা প্রথম পাতায় উল্লিখিত সংখ্যার চেয়ে বেশি হলেও কড়া পদক্ষেপ করবে সংসদ। শুধু রাজনৈতিক স্লোগানই নয়, অশোভন বা অপ্রাসঙ্গিক কথা লিখলেও তা শৃঙ্খলাভঙ্গের আওতায় পড়বে। অবোধ্য ভাষায় উত্তর লিখলে বিপদে পড়বেন পরীক্ষার্থীরা।

    উত্তরপত্র হলের বাইরে নিয়ে চলে গেলে, পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত কোনও শিক্ষক বা আধিকারিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার বা তাঁকে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা, তাঁদের কাজে বাধা দেওয়া, পরীক্ষাকেন্দ্রে ভাঙচুর, ঝগড়া-ঝামেলা, অন্য পরীক্ষার্থীকে উত্তর লিখতে সাহায্য করা বা অন্যের থেকে সাহায্য নেওয়া, হাজিরায় সই না করে চলে যাওয়ার কারণেও পরীক্ষা বাতিল হতে পারে। প্রসঙ্গত, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রকাশিত ২০০১ সালের পরীক্ষাবিধিতে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেখানেও অশোভন, অপ্রাসঙ্গিক লেখা বা ছবি আঁকার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সংস্থান আছে। কিন্তু আলাদা করে রাজনৈতিক স্লোগানের বিষয়টির উল্লেখ নেই। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ওই সব বিধির আওতায় রাজনৈতিক স্লোগানও পড়ার কথা। উত্তরপত্রে তা প্রাসঙ্গিক বা কাঙ্খিতও নয়।

    এক শিক্ষকের কথায়, ‘জয় শ্রীরাম ধর্মীয় স্লোগান হলেও সেটি রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করে বিজেপি। একটি রাজ্যে এই স্লোগান লিখে পরীক্ষায় পাশ করার চেষ্টা করেছিলেন কিছু ছাত্র। তা নিয়ে বেশ জলঘোলা হয়েছিল। তাই বিধিতে এই পয়েন্ট রাখাটা অযৌক্তিক কিছু নয়। তাছাড়া, স্লোগান না হলেও কোনও রাজনৈতিক মতামত পরীক্ষার ক্ষেত্রে এড়িয়ে যাওয়াই উচিত।’ তিনি আরও জানান, উচ্চ মাধ্যমিকের ২০০৬ সালের বিধিতে রাজনৈতিক স্লোগানের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা ছিল। বর্তমান পরিস্থিতির কারণেই বিষয়টি নিয়ে বেশি হইচই হচ্ছে। সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য এই শোরগোল নিয়ে রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করেছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)