• গঙ্গাপাড়ের ছ’টি জায়গায় উন্নয়নমূলক প্রকল্প কেন্দ্রের, পরিবেশের ক্ষতির শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
    বর্তমান | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: গঙ্গার পাড় বরাবর উন্নয়ন প্রকল্প। পোশাকি নাম ‘হুগলি নদীর তীরের উন্নয়ন।’ কিন্তু উন্নয়নের নামে যেভাবে হোটেল, রিসর্ট, রেস্তরাঁ, বিনোদন পার্ক, ব্যাঙ্কোয়েট গড়ার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র, তা নিয়েই ওয়াকিবহাল মহলে উঠছে প্রশ্ন। অভিযোগ উঠছে পরিবেশ নষ্টের। একইসঙ্গে সাংস্কৃতিক ভাবনার ওপর আঘাতেরও। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের এই উন্নয়ন উদ্যোগে সব মিলিয়ে গঙ্গা পারের ৬২.৩৪ একর জমি চলে যাবে প্রকল্পের কাজে। তাই বাস্তবায়নের আগে পরিবেশের ওপর আদৌ কী কুপ্রভাব পড়তে পারে, তা প্রকাশ করার দাবিতে সরব পরিবেশবিদরা। 

    কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট (বর্তমানে নাম শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পোর্ট, কলকাতা) মায়াপুরের স্বরূপগঞ্জ, বজবজ, রায়চক, ময়াপুর, নুরপুর, কলকাতা — এই ছ’টি জায়গার উন্নয়ন করার প্রকল্প নিয়েছে। কোথাও জমির পরিমাণ তিন একর তো কোথাও ২৮ একর। বন্দরের জমি ব্যবহার করা হবে বাণিজ্যিক কাজে। কোথাও হবে হোটেল, কোথাও ইকো-রিসর্ট। কোথাও কাফে বা শপিং মল। জাহাজ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, মায়াপুরে ইস্কনের কাছে স্বরূপগঞ্জে হবে ফেরি পরিষেবা। বজবজে ক্যাফে। রায়চকে শপিং মল। কলকাতায় কমার্শিয়াল প্লাজা। গঙ্গার পাড় বরাবর এই ছ’ জায়গায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পের জন্য ডাকা হয়েছে টেন্ডার।

    কিন্তু এভাবে গঙ্গার পাড়ে তথাকথিত উন্নয়নের নামে লাগামছাড়া বাণিজ্যিক ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবিদদের একাংশ। বাংলার বিভিন্ন পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত মামলায় সরকারকে মত বদলাতে বাধ্য করা পরিবেশ সচেতক সুভাষ দত্তই হোক বা উত্তরাখণ্ডের চার ধাম প্রকল্পে সুপ্রিম কোর্টের গঠন করা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির অন্যতম সদস্য  হেমন্ত ধায়ানি, কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষর উল্লেখিত প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সুভাষবাবু বলেন, নদীর হাই টাউড লেভেল অর্থাৎ যত পর্যন্ত জোয়ারের জল আসে, সেই এলাকা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। নদীর তিরে ওই এলাকার ১৫০ ফুট পর্যন্ত কোনও প্রকল্প করা উচিত নয়। তাই এ ধরনের প্রকল্পের উদ্যোগের আগে পরিবেশের উপর কোনও অংশে কী প্রভাব পড়তে পারে, তার বিস্তারিত সম্ভাব্য রিপোর্ট প্রকাশ করুক কেন্দ্রীয় সরকার। একইভাবে হেমন্ত ধায়ানির মন্তব্য, হোটেল, রিসর্ট, শপিং মল হলে তার বর্জ্য, নোংরা সবই পড়বে গঙ্গার জলে। ফলে দূষণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রবল। তাছাড়া গঙ্গার ধারে সাধারণত, আশ্রম, ধ্যান, তপস্যার জায়গা হওয়াই ভারতীয় সংস্কৃতির চিরন্তন ধারা। সেই ঩ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়বে। ফলে চার ধাম প্রকল্পে যেমন সরকারকে সচেনত করার পরেও কেন্দ্র কথা না শুনে কার্যত পাহাড়ে বিপদ ডেকে এনেছে, এক্ষেত্রেও উন্নয়নের নামে গঙ্গার তীরের চরিত্র বদল বাঞ্চনীয় নয়। 
  • Link to this news (বর্তমান)