• তরুণী খুনে জড়িত আরও কেউ? থমকে তদন্ত, আর জি কর কাণ্ডে নয়া তত্ত্ব সিবিআইয়ের
    বর্তমান | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনে কি একা সঞ্জয় রায়ই জড়িত? নাকি তার সঙ্গে ছিল আরও কেউ? এই গোলকধাঁধাতেই থমকে গিয়েছে সিবিআই তদন্ত। কলকাতা পুলিসের হাতে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় ছাড়া আর কারও ডিএনএ মেলেনি নিহত চিকিৎসকের শরীরে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে হওয়া ডিএনএ টেস্টে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলে খবর। কিন্তু সে-ই খুন করেছে কি না, সেবিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। ১৮ দিন কেটে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সির কাছে তবু স্পষ্ট হয়নি যে, ধর্ষণ-খুন একই সঙ্গে হয়েছে নাকি আগে খুন তারপর ধর্ষণ! তরুণী চিকিৎসককে অন্য কোথাও খুন করে মৃতদেহ সেমিনার রুমে রাখা হয়েছিল কি না, সেব্যাপারেও ইতিমধ্যে একটি ভাষ্য খাড়া করেছে সিবিআই। সেই বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা হতে না হতে এবার সামনে এসেছে নয়া তত্ত্ব— তরুণী চিকিৎসকের খুনে জড়িত আরও অন্য কেউ? যদিও তদন্তে তা নিয়ে আলো দেখাতে ব্যর্থ এজেন্সির কর্তারা। বরং প্রমাণ লোপাটের ফাটা রেকর্ড বাজিয়ে কলকাতা পুলিসের তদন্তে কোথায় কোথায় ‘গাফিলতি’ ছিল, সেটা খুঁজতেই তাঁরা ব্যস্ত।

    সিবিআইয়ের শ্লথগতির তদন্ত বর্তমানে একাধিক সম্ভাবনার উপর ভর করে এগচ্ছে। যদিও তরুণী চিকিৎসকের দেহে আঘাতের ধরন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলার পরও তারা কোনও উপসংহারে পৌঁছতে পারেনি।  তদন্তকারী দলের একদল অফিসার মনে করছেন, এটা সঞ্জয়ের একার কাজ নয়। আরও অনেকে হাজির ছিল ঘটনাস্থলে। কিন্তু তারা কারা? এই নিয়ে অন্ধকারে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। অভিযুক্ত সিভিক একা এই কাজ করে থাকলে ফরেন্সিক রিপোর্টে তা স্পষ্ট হবে। সেক্ষেত্রে নিহত ডাক্তারের শরীরে মিলবে শুধু সঞ্জয়েরই হাতের ছাপ, নখের আঁচড়। যদি সেই রিপোর্টে যদি একাধিক হাতের ছাপ মেলে, তবেই পাকা হবে সিবিআইয়ের সন্দেহ। এখন পর্যন্ত তেমন অকাট্য কোনও প্রমাণ মেলেনি। তবে তদন্তকারীদের দাবি, পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণ একের অধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

    আর একটি সম্ভাবনার কথাও ভাবাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের। সেটা হল— আগে খুন তারপর ধর্ষণ নাকি দুটোই একসঙ্গে? কিংবা ধর্ষণকারীকে চিনে ফেলায় তরুণী চিকিৎসককে খুন হতে হয়েছে, সেই যুক্তিও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও এত সম্ভাবনার ভিড়ে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন অফিসাররা। তাঁদের যুক্তি, ক্রাইম সিন বা ঘটনাস্থল এতটাই পরিপাটি যে সেখানে খুনের আগে সামান্যতম কোনও প্রতিরোধের চিহ্নটুকু পর্যন্ত মিলছে না। আর যদি অন্য কোথাও খুন করে দেহ সেমিনার রুমে আনা হয়, সেক্ষেত্রে সিসি ক্যামেরায় তা ধরা পড়ার কথা। তেমন কিছু দেখা যায়নি। খুনের পর মৃত তরুণীকে ধর্ষণের জন্যই কি কেউ ডেকে এনেছিল মদ্যপ সঞ্জয়কে? তাহলে কীভাবে তারা সিসি ক্যামেরা এড়াল? এই প্রশ্নগুলোর কোনও উত্তর এখনও নেই সিবিআইয়ের কাছে। অফিসারদের দাবি, সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ সেমিনার হলে মৃতদেহ দেখতে পান এক জুনিয়র ডাক্তার। খবর যায় চেস্ট মেডিসিনের এক অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের কাছে। দশটায় ফোন পান প্রাক্তন অধ্যক্ষ। ১০টা ১০ মিনিট নাগাদ টালা থানার আউটপোস্টে খবর যায়। হাসপাতালের আধিকারিকদের ফোনাফুনি করতেই ৪০ মিনিট কেটে গেল? কি হচ্ছিল এত সময় ধরে? এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে ওই জুনিয়র ডাক্তার বিভিন্ন রকম জবাব দেওয়ায় ধোঁয়াশা বেড়েছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই ৪০ মিনিটেই যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়েছে। আর তা হয়েছে হাসপাতালের এক শীর্ষ কর্তার তদারকিতে। 
  • Link to this news (বর্তমান)