এই সময়: যাদবপুরে র্যাগিং ও ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় বেআব্রু হয়ে গিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে নৈরাজ্যের ছবি। বহিরাগত থেকে প্রাক্তনী — হস্টেলে চলত তাঁদেরই ‘শাসন’। সেই সংক্রমণ যে তলায় তলায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরও বিভিন্ন হস্টেলে থাবা বসিয়েছে, এ বার সে প্রসঙ্গ এল সামনে।অভিযোগ, কলকাতাতেও হস্টেলের বড় অংশ দখল করে থাকেন প্রাক্তনীরা। ১০-১৫ বছর আগে পাশ করে যাওয়া প্রাক্তনীরাও ঘর দখল করে আছেন! সেই ঘর ভাড়া দেওয়া, বাইরের লোকজন-আত্মীয়স্বজনকে এনে রাখার অভিযোগও উঠছে এঁদের বিরুদ্ধে। কলকাতার কারমাইকেল হস্টেলে সম্প্রতি এক বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়াকে র্যাগিং ও বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় অভিযুক্তও একজন প্রাক্তনী।
কারমাইকেল থেকে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের পিএইচডি হস্টেল, নিউ ল থেকে বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের হস্টেল — চিত্রটা সর্বত্র এক বলে অভিযোগ। পাশ করে যাওয়া প্রাক্তনীদের এই দাপট ভাঙতে আগেও নানা কড়া পদক্ষেপের কথা শুনিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি বলে আবাসিকদের একাংশের অভিযোগ। এ বারও র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠতে নড়েচড়ে বসেছেন কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বলা হয়েছে — কোনও প্রাক্তনী বা বহিরাগত হস্টেলে থাকতে পারবেন না। থাকলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হবে। তারপরেও কেউ থেকে গেলে মিটিং করে তাঁর ডিগ্রি বাতিল করবে সিন্ডিকেট। এতসব সত্ত্বেও কারমাইকেলের অভিযুক্ত প্রাক্তনী অবশ্য শনিবারও হস্টেল থেকে নিজের মালপত্র নিয়ে যাননি। অভিযোগকারী পড়ুয়ার সঙ্গে একই ঘরে থাকতেন তিনি।
অভিযোগকারীর দাবি, শনিবার বিকেলের দিকে তিনি খাওয়ার জন্য ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন কেউ দরজায় তালা মেরে দিয়েছে! পরে হস্টেল-সুপার ঘরটি খুলে দেন। পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, কারমাইকেলে ঘর দখল করে রেখেছেন বহু প্রাক্তনীই। তাঁদের এক এক জনের দখলে একাধিক ‘বেড’-ও রয়েছে। তাঁরা সে সব ভাড়ায় খাটান। আর নিজেদের পরিবার, পরিজন এমনকী বন্ধুর পরিবারের জন্যও সে সব ফ্রি। পিএইডি হস্টেলেও আবার এমন অনেক প্রাক্তনী আছেন, যাঁরা কোথাও গেলে ঘরে তালা মেরে যান।
ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের নেতা মাল্যবান গঙ্গোপাধ্যায় এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অভিযোগ, এই প্রাক্তনীদের এতটাই দাপট যে তাঁরা সুপারকেও ধমকে চমকে রাখেন! বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত অবশ্য বলেন, ‘আমরা কড়া ব্যবস্থার কথা বলেছি। নিয়মিত ভিজিল্যান্সের জন্য টিম গঠন করা হবে।’
যদিও কারমাইকেলে র্যাগিংয়ের অভিযোগ পাওয়ার ১৯ দিন পরেও বিশ্ববিদ্যালয় তেমন ব্যবস্থা নেয়নি। খবর প্রকাশ্যে আসতেই আমহার্স্ট স্ট্রিট থানাকে সব জানানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, এফআইআর দায়ের করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।