সপ্তসিন্ধুর পাঁচ নম্বর বাধা অতিক্রম করলেন কালনার জলকন্যা সায়নী দাস। দেশের মধ্যে প্রথম মহিলা সাঁতারু হিসেবে উত্তর আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মাঝে ৩৫ কিমি দূরত্বের নর্থ চ্যানেল সাঁতরে পার করলেন তিনি। একইসঙ্গে এশিয়ার প্রথম মহিলা সাঁতারু হিসেবে পঞ্চসিন্ধু জয়ের রেকর্ডও গড়লেন।চলতি বছরের এপ্রিলেই সায়নী জয় করেন নিউ জিল্যান্ডের কুক প্রণালী। তার ঠিক পাঁচ মাসের মাথায় সপ্তসিন্ধুর আরও একটি চ্যানেল জয় সায়নীর কাছে স্বপ্নের মতোই লাগছে। কুক প্রণালী ছাড়াও অতীতে সায়নী অতিক্রম করেছিলেন ইংলিশ চ্যানেল, ক্যাটালিনা এবং মলোকাই চ্যানেল। এর মধ্যে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রটনেস্ট চ্যানেল পার করলেও তা সপ্তসিন্ধুর মধ্যে পড়ে না। এ বার তাঁর সামনে লক্ষ্য, সুগারু ও জিব্রাল্টার প্রণালী। ওই দুই প্রণালী জয় করলেই সায়নীর মাথায় উঠবে সপ্তসিন্ধুর মুকুট।
নর্থ চ্যানেল জয় করে সায়নী জানিয়েছেন, অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে তাঁকে সাঁতার কাটতে হয়েছে। শেষের দিকে উত্তাল সমুদ্রের মুখে পড়েন তিনি। সায়নীর এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তাঁর শহর কালনা ও রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে থাকা গুণমুগ্ধরা। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর রাতে সায়নী ফিরছেন কালনার বারুইপাড়ার বাড়িতে।
বাবা রাধেশ্যাম দাস ও মা রূপালি দাসকে নিয়ে ২ অগস্ট বেলফাস্টে পৌঁছন সায়নী। ২৫ অগস্ট থেকে ৩০ অগস্টের মধ্যে যে কোনও দিন জলে নামার কথা ছিল তাঁর। তবে গত কয়েকদিন প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে জলে নামা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ২৯ অগস্ট বৃহস্পতিবার চ্যানেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি মেলে। ৩০ অগস্ট শুক্রবার চ্যানেল পার হওয়ার লক্ষ্যে জলে নামেন তিনি।
ওই দিন উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডোনাঘাদি থেকে স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৪৯ মিনিটে সাঁতার শুরু করেন সায়নী। স্কটল্যান্ডের পোর্টপ্যাট্রিকে যখন তিনি সাঁতার শেষ করেন ততক্ষণে পেরিয়ে গিয়েছে ১৩ ঘণ্টা ২২ মিনিট। সায়নী জানান, তিনি যখন জলে নামেন তখন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি। এক সময়ে তাপমাত্রা নেমে যায় ৯ ডিগ্রিতে।
‘এই সময়’কে ফোনে সায়নী বলেন, ‘এই চ্যানেল পার করা খুব প্রেস্টিজিয়াস ও টাফ ছিল। শুক্রবার বিভিন্ন দেশের আট জন জলে নেমেছিলেন। আমাকে নিয়ে চার জন চ্যানেল পার করতে পেরেছেন। নর্থ চ্যানেল স্যুইমিং অ্যাসোসিয়েশন খুব হেল্প করেছে।’ জানাচ্ছেন, ১০ ঘণ্টায় ফিনিসিং পয়েন্টের কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। কিন্তু প্রচণ্ড ঢেউয়ের কারণে তাঁকে সমস্যায় পড়তে হয়।
বলেন, ‘খালি এগোচ্ছিলাম আর পিছিয়ে যাচ্ছিলাম। প্রায় তিন ঘণ্টা এক জায়গাতেই সাঁতার কাটি।’ জানিয়েছেন, বিষাক্ত জেলিফিসের হামলার মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁকে। সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, ‘প্রায় ২০ বার জেলিফিস আমার সংস্পর্শে এসেছিল। নর্থ চ্যানেলের জলে লায়নস্ মেন নামে ভয়ঙ্কর জেলিফিস থাকে। ওদের আক্রমণে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় তীব্র জ্বালা রয়েছে।’
জানাচ্ছেন, জলে নামার আগে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ জেলিফিস নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। অন্ধকার হলে জলের উপরে চলে আসে জেলিফিস। সায়নী বলেন, ‘আমাকে বেশ খানিকটা সময় অন্ধকারে সাঁতার কাটতে হয়েছে। তাই জেলিফিসের মুখে পড়তে হয়।’ সাঁতার শেষের পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সায়নী। ডাক্তাররা দ্রুত তাঁর চিকিৎসা করেন। সোমবার চ্যানেল কর্তৃপক্ষ সায়নীর হাতে শংসাপত্র ও মেডেল তুলে দেবেন।
তবে সপ্তসিন্ধুর বাকি দু’টি চ্যানেল অতিক্রম করা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন সায়নী ও তাঁর পরিবার। সায়নী বলেন, ‘সুগারু ও জিব্রাল্টার খুবই ব্যয়বহুল।’ বাবা রাধেশ্যাম দাস বলেন, ‘বাজারে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার দেনা। মেয়ের সাফল্যের মধ্যেও কী ভাবে তা শোধ করব তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। কোনও স্পনসর পেলে খুব সুবিধা হয়।’