• সংস্কার নেই, ঝাড়গ্রামের পার্কগুলির হতশ্রী চেহারা, বাড়ছে সাপের উপদ্রব
    বর্তমান | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম: ঝাড়গ্ৰাম শহরে ছোটবড় আট-নয়টি পার্ক রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পার্কগুলি হতশ্রী চেহারা নিয়েছে। বর্তমানে শহরের ভিতর পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর উপযুক্ত জায়গা নেই। লক্ষাধিক টাকায় সংস্কার হওয়া পার্কগুলি বিষধর সাপ ও পোকামাকড়ের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। তাই পার্ক সংস্কারের দাবি তুলছেন শহরবাসী।

    ঝাড়গ্ৰাম শহরে নগরায়ণের ছোঁয়া এসে লেগেছে। গাছপালা কেটে একের পর এক আবাসন গড়ে উঠেছে। অরণ্য শহর ধীরে ধীরে কংক্রিটের জঙ্গল হয়ে উঠছে। শহরের ভিতর হাতে গোনা যে ক’টি পার্ক রয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলো হতশ্রী চেহারা নিয়েছে। পার্কগুলোতে একসময় শহরবাসী পরিবার নিয়ে ভিড় জমাতেন। কচিকাঁচাদের আওয়াজে সবুজ পার্ক মুখর হয়ে উঠত। পার্কগুলি এখন বিষধর সাপ, পোকামাকড়ের আড্ডায় পরিণত হয়েছে। ঝাড়গ্রাম শহরের কেন্দ্রস্থলে রবীন্দ্র পার্ক অবস্থিত। সাংস্কৃতিক কিছু উৎসব অনুষ্ঠান এখানে হয়। রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় পার্কটির অবস্থা বেহাল। একসময় এই পার্কে শহরের বাসিন্দাদের ভিড় জমে থাকত। অল্প সময়ের জন্য বিশ্রাম নিতে অনেকেই আগে পার্কে আসতেন। শহরের ভিতর ‘বৈকালিক’ পার্ক লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়েছিল। বয়স্কদের বেড়ানোর জন্য পার্কটি তৈরি করা হয়েছিল। এই পার্কটিরও দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। শহরের লোকাল বোর্ড এলাকায় সঞ্চয়িতা পার্কে বোটিংয়ের ব্যবস্থা ছিল। এখন বোটিং হয় না। পার্কটিতে বাসিন্দাদের যাওয়া একপ্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ঘোড়াধরা পার্ক সংস্কার করার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে দশ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছিল। পার্কের বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ হলেও পার্কটি এখনও ব্যবহারের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। একদিকে শহরজুড়ে সবুজ কমছে, অন্যদিকে পার্কগুলি ব্যাবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শহরের বাসিন্দারা পার্কগুলি সংস্কারের দাবি তুলেছেন। 

    ঝাড়গ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান কবিতা ঘোষ বলেন, বাম আমলে পার্কগুলির কোনও সংস্কার করা হয়নি। তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা ধীরে ধীরে পার্কগুলি সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছে। দুর্গাপুজোর আগে পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা পার্কটির সংস্কার করা হবে। পর্যাপ্ত ফান্ডের অভাবে শহরের পার্কগুলির সংস্কারের কাজ থমকে আছে। তবে ধাপে ধাপে শহরের পার্কগুলির সংস্কারের কাজ হবে। ঝাড়গ্ৰাম পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বর্তমানে সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, ঝাড়গ্ৰাম শহরে ছোটবড় মিলিয়ে ৮ থেকে ৯টা পার্ক আছে। বাম আমলে পার্কগুলি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো। শহরের বাসিন্দারা এখানে সময় কাটাতে আসতেন। ছোটদের খেলাধুলোর ব্যাবস্থা ছিল। এখন পার্কগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পার্কগুলির হতশ্রী চেহারা হয়েছে। ঝাড়গ্ৰাম শহরের বাসিন্দা শিল্পী উপল পাহাড়ি বলেন, ঝাড়গ্ৰাম শহরের পরিচিতি অরণ্য শহর বলে। গত দশ বছরে এই শহরে, পুলিস লাইন, মেডিক্যাল কলেজ, নতুন ডিএম অফিস হয়েছে। ফলে এলাকায় নির্বিচারে শালগাছ কাটা হয়েছে। উন্নয়ন অবশ্যই দরকার। স্বাভাবিক নিয়মে নগরায়ণ হবে। পরিকল্পনা করে গাছ কাটলে শহরের সবুজ ধ্বংস হতো না। রবীন্দ্র পার্ক, বৈকালিক পার্ক দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। কোনও পার্কে তালা দেওয়া, কোনও পার্ক সাপখোপের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। শহরের বাসিন্দাদের অবসর সময় কাটানোর জায়গা নেই।  পুরসভা পার্কগুলো নিয়মিত সংস্কার করুক, এটাই আমরা চাইছি। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)