• মা দুর্গার চালচিত্রে ছবির বদলে পেপার পাল্পের মডেল
    বর্তমান | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: পুজোর আগে বনকাপাশির শোলা শিল্পীদের পেপার পাল্পের চালচিত্র তৈরির ব্যস্ততা তুঙ্গে। তবে বদলাচ্ছে মা দুর্গার চালচিত্র। হাতে আঁকা পৌরাণিক কাহিনি সম্বলিত চালচিত্রের জায়গা করে নিচ্ছে পেপার পাল্পের নানা মডেল। সেগুলিকেই মঙ্গলকোটের বনকাপাশির শোলা শিল্পীরা মা দুর্গার চালচিত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। এমন চালচিত্রের বরাত মিলছে বেশি অসম থেকে। 

    মঙ্গলকোটের বনকাপাশি গ্রাম শোলাশিল্পের জন্য বিখ্যাত। প্রতিবছর গ্রামের শিল্পীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বড় বড় প্রতিমা বা মণ্ডপ সাজাতে যান। শোলার চাঁদমালা, শোলার উপর চুমকি বা জরি বসিয়ে প্রতিমার সাজ নিয়ে তাঁরা পাড়ি দেন ভিন রাজ্যে। আবার তাঁদের তৈরি শোলার নানা শোপিসও বিদেশে পাড়ি দেয়। বনকাপাশি গ্রামে ১৯৭৯ সাল থেকে শোলাশিল্পের জন্য প্রচুর পুরস্কার এনেছেন শিল্পীরা। ১৯৯০ সালে দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামেশ্বর ভেঙ্কটরমনের হাত থেকে পুরস্কার পেয়েছিলেন স্বনামধন্য শোলাশিল্পি আশিস মালাকার। তার আগে ১৯৭৯ সালে এই শিল্পের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছিলেন কাত্যায়নী মালাকার। ১৯৭৪ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান আরেক শোলাশিল্পী আদিত্য মালাকার। ২০০৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকার আদিত্য বাবুকে ‘শিল্পগুরু’ পুরস্কারে সম্মানিত করেন। সেই ধারাবাহিক এখনও বজায় আছে। তাছাড়া আশিসবাবুর শোলার কাজ আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতেও গিয়েছে। 

    আগে দুর্গা প্রতিমার চালচিত্র হতো হাতে আঁকা নানা পৌরাণিক কাহিনির ছবি দিয়ে। চালচিত্রের দু’ দিকে মা দুর্গার যুদ্ধের ছবি আঁকা হতো। পরে হাতে আঁকা সেই চালচিত্রের বদল ঘটিয়ে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে পৌরাণিক কাহিনি তুলে ধরা হতো। আর এখন সেই জায়গা নিচ্ছে  কাগজের তৈরি নানা মুখোশ। মহেশ্বর, গণেশ থেকে নানা পুতুলের মডেল পেপাল পাল্প দিয়ে তৈরি করছেন বনকাপাশির শোলাশিল্পীরা। তারপর সেগুলি চালচিত্রে বসিয়ে দিচ্ছেন। 

    শোলাশিল্পী প্রসাদ ঘোষ বলেন, আগে হাতে আঁকা চালচিত্র থাকত। আর আমরা শোলার সাজ তৈরি করতাম। আর এখন আমাদের পেপার পাল্পের মডেল তৈরি করে চালচিত্র হিসাবে ব্যবহার করছি। আর এসব কাজ অসমের  গুয়াহাটির বাঙালিরা বেশি পছন্দ করছেন। 

    শিল্পী স্বপ্না ঘোষ, রীমা ঘোষ বলেন, অসমের তিনসুকিয়া থেকে এবার আমাদের বরাত এসেছে। অসমের মানুষ বেশি রঙচঙ পছন্দ করছেন। তাই তাঁরা সাদা শোলার বদলে রঙিন শোলার সাজ চাইছেন। বেঙ্গালুরু থেকেও একই সাজের বরাত এসেছে। তবে বাংলার সাজের ঐতিহ্য এক্কেবারে আলাদা। চালচিত্র বদলে নানা মডেলের চালচিত্রের চাহিদা বাড়ছে। - নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)