• মুদিখানা দোকান সামলে মিনিদুর্গা গড়েন দেবাশিস, বরাত মিলছে বিদেশ থেকেও
    বর্তমান | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: পেটের ভাত জোগাড়ে মুদিখানা দোকান চালান। কিন্তু, ছাড়তে পারেননি মূর্তি গড়ার নেশা। কাজের ফাঁকে নিজের মনে গড়েন মিনিদুর্গা। সেই দুর্গা এখন সমাদৃত রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও। 

    জলপাইগুড়ির খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রাখালদেবীর বাসিন্দা দেবাশিস ঝা। পরিবারের কেউ প্রতিমা শিল্পী ছিলেন না। কিন্তু, ছোট থেকেই মূর্তি গড়ার ঝোঁক। কাদামাটি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতেই মূর্তি গড়ার কাজ শুরু তাঁর। নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এখন তিনি মিনিদুর্গার শিল্পী হিসেবে জেলায় পরিচিত মুখ। 

    কখনও ৫ ইঞ্চির মাটির দুর্গা বানিয়ে সাড়া ফেলেছেন। কখনও আবার গড়েছেন ১০ ইঞ্চির দুর্গা। তাঁর তৈরি প্রতিমা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি গিয়েছে অসম, রাজস্থান এমনকী নেপালে। এবছর চারটি মিনিদুর্গা বানিয়েছেন। উচ্চতা ১০-১২ ইঞ্চি। তাঁর আশা, এবারও ভিনরাজ্য কিংবা বিদেশ থেকে দুর্গার বায়না আসবে। 

    স্বামী-স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে সংসার দেবাশিসবাবুর। ছেলে আইটিআই পড়ছেন। স্ত্রী বেবি ঝা প্রতিমা তৈরির কাজে সাহায্য করেন। বাড়িতেই একটা ছোট মুদিখানা দোকান। মাঝেমধ্যে পুরোহিতেরও কাজ করেন। বাকি সময়টা মূর্তি তৈরিতে বুঁদ হয়ে থাকেন বছর পঞ্চাশের মানুষটি।

    শুরুটা হয়েছিল কীভাবে? দেবাশিসের কথায়, তখন তিনি চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া। হঠাৎ শখ হয় মূর্তি বানাবেন। পালপাড়ায় মৃৎশিল্পীদের কারখানার সামনে দাঁড়িয়ে দেখতেন কীভাবে মূর্তি গড়েন তাঁরা। তারপর নিজেই বাড়ি ফিরে কাদামাটি নিয়ে শুরু করেন চেষ্টা। কিন্তু, সমস্যা দাঁড়ায় প্রতিমার মুখ নিয়ে। কোনও শিল্পী ছাঁচ দিতে চাননি। অনেক ঘুরে এক প্রবীণ শিল্পী প্রতিমার মুখের একটা পুরনো ছাঁচ দেন। সেটা বালিশের পাশে নিয়ে ঘুমোতেন। সারাক্ষণ দেখতেন আর ভাবতেন, কীভাবে প্রতিমার মুখ বানাতে হয়। 

    আনন্দচন্দ্র কমার্স কলেজে পড়াশোনা করেছেন। মনপ্রাণ জুড়ে প্রতিমা তৈরির নেশা থাকলেও পেশা করতে পারেননি। খুলতে হয়েছে মুদিখানা দোকান। তিনি বলেন, প্রথমে বড় প্রতিমা বানিয়ে বাড়িতে পুজো করতাম। কিন্তু, তিলে তিলে গড়া সেই প্রতিমা যখন বিসর্জন দিতে হতো, তখন কান্না পেয়ে যেত। তাই মিনি প্রতিমা বানানো শুরু করি। নিজের হাতেই খুদে দুর্গার সাজ বানাই। -নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)