• ল্যান্ড মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য, মাটিগাড়ার পর নকশালবাড়িতে কমেছে আমন ধানের জমি
    বর্তমান | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: মাটিগাড়ার পর নকশালবাড়ি। হু হু করে কমছে চাষের জমি। দু’বছরে নকশালবাড়িতে আমন ধানের এলাকা কমেছে প্রায় ১২০০ হেক্টর। অভিযোগ, জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যের জেরে এমন পরিস্থিতি। চাষের জমিতে গড়ে উঠছে বাড়ি, বহুতল ভবন, মার্কেট কমপ্লেক্স প্রভৃতি। এজন্যই সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিকে নিয়ে পুরসভা গঠনের দাবি উঠেছে। 

    শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অরুণ ঘোষ অবশ্য বলেন, জনসংখ্যার চাপে মাটিগাড়া ও নকশালবাড়িতে নগরায়ণ হয়েছে। চাষের জমি কমেছে। সেই জায়গায় নতুন নতুন বসতি গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন মহল পুরসভা গঠনের দাবিও তুলেছে। বিষয়টি রাজ্য সরকারের নজরে রয়েছে। শীঘ্রই সেই দাবি পূরণ হবে বলেই আশা করছি। 

    শিলিগুড়ি শহরের পাশেই মাটিগাড়া ব্লক। প্রতি বছর এখানে আমন ধানের এলাকা কমছে। কৃষিদপ্তর সূত্রের খবর, গতবছর মাটিগাড়ায় আসন ধান চাষের এলাকা ছিল ৬০০ হেক্টর। তার আগের বছর ছিল ৭০০ হেক্টর। তা কমতে কমতে দাঁড়িয়েছে ৫০০ হেক্টরে। পাশের ব্লক নকশালবাড়িতেও কমছে ধান চাষের এলাকা। গতবছর এখানে আমন ধান চাষ হয় ৫৪০০ হেক্টর জমিতে। এর আগের বছর যা ছিল ৬ হাজার হেক্টর। এবার সেই জমির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৪৮০০ হেক্টর। অর্থাৎ দু’বছরে এখানে চাষের জমি কমেছে ১২০০ হেক্টর। 

    শিলিগুড়ির সহকৃষি অধিকর্তা অনুপম তরফদার বলেন, মহকুমায় ব্লক ভিত্তিক আমন ধানের জমির এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মাটিগাড়া ও  নকশালবাড়িতে আমন চাষের এলাকা কমেছে। এবিষয়ে জেলা প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। 

    অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট দু’টি ব্লকেই ল্যান্ড মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য চরমে। ইতিমধ্যে মাটিগাড়ায় অভিযান চালিয়ে বেশকিছু সরকারি জমি উদ্ধার করেছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর। তারা নকশালবাড়িতেও বেশকিছু খাস জমি উদ্ধার করেছে। সেখানে কয়েকজন জমি মাফিয়ার বিরুদ্ধে তারা থানায় অভিযোগও করেছে। ইতিমধ্যে জমির মামলায় নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মাধ্যক্ষ সহ কয়েকজনকে পুলিস গ্রেপ্তারও করেছে।

    স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ল্যান্ড মাফিয়াদের দাপটেই সংশ্লিষ্ট দু’টি ব্লকে ক্রমাগত কমছে চাষের জমি। মালিকদের ভয় দেখিয়ে কিংবা সহজে বড় লোক হওয়ার টোপ দিয়ে চাষের জমি কব্জা করা হচ্ছে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর অবশ্য জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জমির বেআইনি কারবারের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। খাস জমি উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

    প্রসঙ্গত, বহুদিন আগই মাটিগাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ গড়ে উঠেছে। এরপর সংশ্লিষ্ট এলাকায় উপনগরী, একের পর এক বহুতল আবাসন, মার্কেট কমপ্লেক্স, শপিংমল, বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল ও কলেজ গড়ে উঠেছে। নকশালবাড়িতেও বহুতল আবাসন, মার্কেট কমপ্লেক্স গড়ে উঠছে। কয়েক বছরের মধ্যে দু’টি এলাকার চেহারা আমূল পাল্টেছে। সেজন্য এলাকাগুলি নিয়ে পুরসভা গড়ার দাবি উঠেছে।  
  • Link to this news (বর্তমান)