• চায়ের দোকানে নাবালিকাকে যৌন নির্যাতন, রণক্ষেত্র মধ্যমগ্রাম 
    বর্তমান | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: আর জি করের চিকিৎসক মৃত্যুর জেরে এখনও অশান্ত রাজপথ। এমন অবস্থায় এক নাবালিকাকে যৌন হেনস্তার অভিযোগে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল মধ্যমগ্রাম। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে মধ্যমগ্রামের রোহান্ডা-চণ্ডীগড় পঞ্চায়েতের বিহারিপাড়া এলাকায়। অভিযুক্তের বাড়ি, দোকানে ভাঙচুর চালিয়েছে উত্তেজিত জনতা। পাশাপাশি স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যার বাড়িতেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। মধ্যমগ্রাম থানার বিরাট পুলিস বাহিনী, র‍্যাফ এসে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের সেল। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে আব্দুর রউফ (৩৩) ও আব্দুল হাফিজকে। হাফিজ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী। ধৃতদের রবিবার বারাসত আদালতে তোলা হলে মূল অভিযুক্ত আব্দুল রউফকে তিনদিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। অন্য অভিযুক্ত আব্দুল হাফিজকে সাতদিনের জেল হেফাজত দেওয়া হয়েছে।

    মধ্যমগ্রাম থানার রোহান্ডা-চণ্ডীগড় পঞ্চায়েতের রাজবাটির বিহারিপাড়ায় বাড়ি ন’বছরের নাবালিকার। তার বাবা ফুচকা বিক্রেতা। আব্দুল রউফের ওই এলাকাতেই একটি চায়ের দোকান আছে। শনিবার রাত ১০টা নাগাদ রউফ প্রতিবেশী নাবালিকাকে লুডো খেলার নাম করে দোকানে ডেকে নিয়ে যায়। অভিযোগ, এরপরেই দোকানের দরজা কিছুটা বন্ধ করে তাকে যৌন হেনস্তা করে সে। তখন দোকানের সামনে বেশ কয়েকজন ক্যারাম খেলছিলেন। নাবালিকাকে দোকানে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁদের সন্দেহ হয়। কিছুক্ষণ পরে তাঁরা উঁকি দিতেই বিষয়টি নজরে আসে। খবর পেয়ে দরজা খুলে মেয়েকে উদ্ধার করে পরিবার। নাবালিকার মুখ থেকে বিষয়টি জানার পরই উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। দোষীর গ্রেপ্তারের দাবিতে সরব হন স্থানীয়রা। ঘটনাস্থলে আসে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী তথা তৃণমূল নেতা আব্দুল হাফিজ। তিনি বিষয়টি মিটমাট করার চেষ্টা করেন। তাতে আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে এলাকার মানুষ। অভিযুক্তের বাড়ি, দোকানে ভাঙচুরের পাশাপাশি পঞ্চায়েত সদস্যার বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। শুরু হয় ইটবৃষ্টিও। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা ছিল এলাকার। ঘটনাস্থলে বিরাট পুলিস সহ র‍্যাফ আসে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাচ্ছে আঁচ পেয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিস লাঠিচার্জ করে। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের সেল। রবিবার ভোরে আব্দুল রউফ ও তৃণমূল নেতা আব্দুল হাফিজকে গ্রেপ্তার করে মধ্যমগ্রাম থানার পুলিস। নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘অভিযুক্তকে আমি ভাই বলে ডাকি। আর সে আমার মেয়ের সঙ্গে এমন করবে ভাবতে পারছি না। অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি চাই।’ এদিকে, নির্যাতিতা কাঁদতে কাঁদতে বলে, লুডো খেলার নাম করে দোকানে নিয়ে গিয়ে আমাকে অত্যাচার করেছে। বারাসত পুলিস জেলার পুলিস সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া বলেন, নাবালিকা যৌন হেনস্তায় মূল অভিযুক্ত আব্দুল রউফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট আইনে মামলা রুজু করেছে পুলিস। আর অভিযুক্তকে আড়াল করার অভিযোগে আব্দুল হাফিজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ সামশের বলেন, অভিযুক্ত এর আগেও এই ধরনের ঘটনায় যুক্ত ছিল। এদিন ফের একই ঘটনা ঘটাল। আর এই ন্যক্কারজনক ঘটনার পর তৃণমূলের নেতা তাকে সমর্থন করল। মধ্যমগ্রামের বিধায়ক তথা খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। পুলিস আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। সিপিএম নেতা আহমেদ খান বলেন, ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা নেই।
  • Link to this news (বর্তমান)