নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সিঁথির মোড়ে মদ্যপ সিভিককে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন রবীন্দ্রভারতীর পড়ুয়ারা। তপ্ত বাক্য বিনিময়ে তখন পরিস্থিতির পারদ চড়ছে। সামলাতে এলেন লম্বা গোঁফওয়ালা এক উর্দিধারী পুলিস। নাম তাঁর তারকেশ্বর আড়ি, সিঁথি থানার সার্জেন্ট। মদ্যপ সিভিককে তিনি বিক্ষোভকারীদের থেকে আড়াল করে গার্ডরেল দিয়ে ঘেরা অংশ থেকে নিরাপদে বের করে দেন। তাই দেখে হতবাক বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা সার্জেন্টকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন, ‘বাহঃ! বাহঃ! স্যার’। এই ফেসবুক লাইভ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। কীভাবে একজন উর্দিধারী সার্জেন্ট মদ্যপ সিভিককে আড়াল করে ছেড়ে দিলেন? এই প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ।
আর জি কর হাসপাতালে ভোররাতে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় কাঠগড়ায় কলকাতা পুলিসের এক সিভিক ভলান্টিয়ার। সেই ঘটনার ২০ দিনের মাথায় পুলিসেরই ব্যারিকেড দেওয়া এলাকায় নেশার ঘোরে ঢুকে যায় সিভিক ভলান্টিয়ার গঙ্গাধর গোঁদ। তাঁকে আটকান পড়ুয়ারা। আন্দোলনরত পড়ুয়া পুরুষোত্তম রায়ের কথায়, ‘এক সিভিক ভলান্টিয়ারের জন্যই আমাদের বোনের এই অবস্থা। তবে সিভিকের বাড়বাড়ন্ত এখনও নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ কলকাতা পুলিস। বরং তাদের আড়াল করার চেষ্টা করছে পুলিস। জলজ্যান্ত উদাহরণ সিঁথি থানার সার্জেন্ট’। এপ্রসঙ্গে মানসী সেন নামে এক তরুণী বলেন, ‘আর জি করের ঘটনার পরেও সাংবাদিক বৈঠকে পুলিস কমিশনার বিনীতকুমার গোয়েল বারবার ধৃত সঞ্জয় রায়ের পরিচয় বা পেশা (সিভিক) গোপন করেন। সঞ্জয়ের পরিচয় জিজ্ঞাসা করেছেন সাংবাদিকরা। কিন্তু, তা আড়াল করে গিয়েছেন খোদ সিপি। সিঁথির ঘটনার ক্ষেত্রেও ওই সার্জেন্ট রীতিমতো গার্ড করেন সিভিককে। সিভিকের অপরাধ আড়াল করার নেপথ্যে উপরমহল থেকে নিচুতলার পুলিস অফিসারদের নিশ্চয়ই কোনও স্বার্থ কাজ করছে’।
বিক্ষোভকারীদের একাংশকে ভাইরাল ভিডিওতে বলতে শোনা গিয়েছে, সাধারণ মানুষ মদ খেয়ে বাইক চালালে কলকাতা পুলিসের তরফে এই একই ব্যবহার পাবেন তো? আকাঙ্ক্ষা চক্রবর্তী নামে এক আন্দোলনকারীর কথায়, ‘সাধারণ মানুষ ট্রাফিকবিধি লঙ্ঘন করলে কোনও যুক্তিই শুনতে নারাজ থাকেন সার্জেন্টরা। শুধু তাই নয়, কেসের কোটা পূরণ করতে উঠেপড়ে লাগেন তাঁরা। তাহলে এই দোষ পুলিস করলে তৎক্ষণাৎ আড়াল করা হল কেন?’ প্রশ্ন উঠছে, সিভিকদের শৃঙ্খলাপরায়ণ করে তুলতে কি ব্যর্থ লালবাজার? এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে আমজনতার মুখে ও সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে।
লালবাজার সূত্রে খবর, শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করলেই এবার সিভিকের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পথে হাঁটবে লালবাজার। মদ্যপ অবস্থায় কোনও কর্মরত সিভিক ভলান্টিয়ার ধরা পড়লেই তাকে ডিমোবিলাইজ (পুলিসি ভাষায়) বা চাকরি থেকে বসিয়ে দেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি, সিভিককে শৃঙ্খলাপরায়ণ করে তুলতে একজন ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলেও লালবাজার সূত্রের খবর। এই মর্মে শীঘ্রই পুলিস কমিশনার একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেন।